নতুন আইজিপি নাকি বেনজিরের মেয়াদ বৃদ্ধি: চলছে আলোচনা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী পুলিশ প্রধান কে হবেন এ নিয়ে ইতোমধ্যেই চলছে নানা গুঞ্জন।
এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় নানা সংকটে পরীক্ষিত বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি রয়েছে সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। পুলিশ প্রধান হিসেবে বাহিনীতে নানামুখী যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে সমাদৃত বর্তমান আইজিপিকেই আরেকটি বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে সরকার।
এছাড়া আরওকয়েকজন কর্মকর্তাও রয়েছেন আইজিপি হওয়ার দৌড়ে। যাদের নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে আলোচনা। বেনজীর আহমেদকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া না হলে ৩১তম পুলিশ প্রধান হিসেবে দেখা যাবে নতুন মুখ।
সূত্র জানায়, পুলিশ প্রধানের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে অনেক সিনিয়র অফিসারের বিষয়গুলোই আলোচনায় আসে। এর মধ্যে পুলিশ হিসেবে কর্মজীবনের সফলতা, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বিবেচনায় পদটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
যাদের নিয়ে আলোচনা
ড. বেনজীর আহমেদ
বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজ, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা চার্লস স্ট্রার্ট ইউনিভার্সিটি ও সিঙ্গাপুরে বিশ্বব্যাংকের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়াশোনা করেন ড. বেনজীর আহমেদ। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার বেনজীর আহমেদকে দেশের ৩০তম পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়। এরপর থেকে তার নানা পদক্ষেপের কারণে ‘জনমুখী পুলিশি সেবা’ পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। থানা থেকে বের করে পুলিশকে মানুষের দোরগোড়ায় নিতে একের পর এক সাহসী ও সময়োপযোগী নির্দেশনাও দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
আইজিপি হিসেবে যোগদানের পর ড. বেনজীর আহমেদের হাত ধরে এসআই-কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ পুলিশে বেশকিছু সংস্কার এসেছে। যোগ হয়েছে নতুন নতুন বিষয়, আধুনিক হয়ে উঠেছে পুলিশ বাহিনী। পুলিশকে জনবান্ধব করতে তার রয়েছে নানা উদ্যোগ। সহজে পুলিশি সেবা পাওয়ায় পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও বেড়েছে।
যে কোনো সংকটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে প্রতিনিয়ত অভিযানসহ তার নানামুখী পদক্ষেপ পেয়েছে প্রশংসা। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সামনে থেকে মানুষকে সেবা দিয়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পুলিশ।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বেনজীর আহমেদকে র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে ভূমিকা পালন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান তিনি। হলি আর্টিসান হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানও বেগবান রেখেছেন তিনি। সুন্দরবনের জলদস্যুতার অবসান ঘটিয়ে একটি স্বস্তির উপকূলীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছেন ড. বেনজীর আহমেদ।
র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার আগে বেনজীর আহমেদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে সপ্তম বিসিএস-এ সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করা ওই কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীন ঢাকা উত্তর, পুলিশ একাডেমি, পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন পর্যায়ে শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন
বাংলাদেশ পুলিশের ৩১তম আইজিপি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। অষ্টম বিসিএস ব্যাচের ওই কর্মকর্তার আগামী ১১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বাহিনী ও সরকারের কাছে তার সুনাম থাকা এই কর্মকর্তাকে আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে সরকার। বাংলাদেশ পুলিশে অসামান্য অবদান ও অনন্য সেবাদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পদকে ভূষিত হয়েছেন। গত বছরের ১৮ অক্টোবর চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ঢাকা রেঞ্জে ও ডিআইজি হিসেবে ডিআইজি (অপারেশনস্), ডিআইজি (প্রশাসন), রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে ময়মনসিংহ ও ঢাকা রেঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এরপর পদোন্নতি পেয়ে তিনি অতিরিক্ত আইজিপির (এইচআরএম) দায়িত্ব পান। র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের আগে তিনি সিআইডি প্রধান হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এস এম রুহুল আমিন
পরবর্তী আইপিজি হিসেবে আলোচনায় আছেন ১২তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) এস এম রুহুল আমিন। তিনি গোপালগঞ্জ সদর থানায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
এস এম রুহুল আমিন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার, ঢাকায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার হিসেবে যোগদান করে বরিশালে পুলিশি সেবার নবদিগন্তের সূচনা করেন।