দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিন দিনব্যাপী যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) বৈঠক আগামীকাল দিল্লিতে শুরু হচ্ছে। দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে এই বৈঠক হচ্ছে এক যুগ পর। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ঘিরে সৃষ্ট জটিলতায় স্থবির ছিল পানি আলোচনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের আগে জেআরসি বৈঠক হলেও এবারও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে এটি দ্রুত সম্পাদনের তাগিদ দেবে বাংলাদেশ। এছাড়া কুশিয়ারা নদী থেকে পানি উত্তোলনে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পাশাপাশি, গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নবগঠিত কারিগরি কমিটির বৈঠক দ্রত অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও ঢাকার পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হতে পারে। বৈঠকে যোগ দিতে কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা আজ সোমবার দিল্লি যাচ্ছেন। তারা মঙ্গল ও বুধবার দুই দিন আলোচনা করে মন্ত্রীদের বৈঠকের জন্যে আলোচনার রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন। আগামী ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার জেআরসি মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পানি সম্পদ মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং সিখাওয়াত। বৈঠকে যোগ দিতে জাহিদ ফারুক বুধবার দিল্লি যাবেন। বৈঠক শেষে আগামী ২৬ আগস্ট দেশে ফিরবেন।

জানতে চাইলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক রোববার (২১ আগস্ট) বলেন, ‘এক যুগ পর মন্ত্রী পর্যায়ে জেআরসি বৈঠক হচ্ছে। আমরা অন্তত আলোচনার ক্ষেত্র তো খুললাম। যদিও সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়নি ১২ বছর।’

তিনি আরও বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর পানির ওপর ভিত্তি করে আমরা পাঁচ হাজার একর জমির জন্য একটা সেচ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পটির জন্য কুশিয়ারা থেকে পানি উত্তোলন করা দরকার। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কুশিয়ারা থেকে আমরা শুকনো মৌসুমে ১৫৬ কিউসেক পানি উত্তোলন করব। ভারতও সমপরিমাণ পানি উত্তোলন করবে। এ ব্যাপারে একটা খসড়া এমওইউ করা হয়েছে। জেআরসি বৈঠকে কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে এমওইউ সই হতে পারে।’

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তার প্রসঙ্গ আমরা অবশ্যই তুলব। আমরা চাইব দ্রুত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির সই হোক। এ ছাড়াও ছয়টি অভিন্ন নদীর একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি করার আলোচনা আগেই শুরু হয়েছে। এ ছয় নদী হলো মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতি, ধরলা ও দুধকুমার। এ বিষয়ে আরও একটি এমওইউ করার কথা বলব। এটার পর আরও ৭-৮টি নদীর জন্য একত্রে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির প্রস্তাব করব।’

তিনি বলেন, ‘অভিন্ন নদীগুলোর জন্য অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব আগেও দিয়েছি। এবারের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’

প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক আরও বলেন, ‘বন্যার পূর্বাভাস নিয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। বর্তমানে পাঁচটি স্টেশন থেকে ভারত বন্যার পূর্বাভাস আমাদেরকে দিয়ে থাকে। আমরা আরও দূরবর্তী আটটি স্টেশন থেকে বন্যার পূর্বাভাস চাইব।’ তিনি বলেন, ‘সীমান্ত নদীগুলোর তীর সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিএসএফ বাধা দিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে আমরা বৈঠকে আলোচনা করব।’

গঙ্গার পানি নিয়ে কী আলোচনা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গঙ্গা নদীর পানি যাতে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় এ বিষয়ে নতুন একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ অংশের ১০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছি। ভারত তাদের কমিটি নিয়ে বাংলাদেশের কমিটির সঙ্গে যাতে দ্রুত বৈঠকে বসে সে বিষয়ে আলোচনা করব। তাদের এ বিষয়ে গবেষণা করতে হবে।’

ফেনী নদী থেকে ভারত সাবরুম শহরের খাবার পানির চাহিদা মেটাতে এক দশমিক আট কিউসেক পানি উত্তোলন করবে বলে আগেই চুক্তি হয়েছে। এখন এই চুক্তি কীভাবে কার্যকর হবে সে বিষয়ে ভারত আলোচনা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালে ২৫ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তিতেই উভয় দেশ গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ ব্যবহারে স্টাডি করবে বলে উল্লেখ আছে।

২০২৬ সাল নাগাদ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবায়নের জন্যও উভয় দেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। তার মধ্যে কেবল গঙ্গার পানিবণ্টনে চুক্তি রয়েছে। তিস্তা চুক্তির খসড়া প্রস্তুতির পর সচিব পর্যায়ে তা সই হয়।

২০১১ সালে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে মন্ত্রী পর্যায়ে চুক্তিটি সই হওয়া চূড়ান্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর শেষ মুহূর্তে আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তি মন্ত্রী পর্যায়ে সই হতে পারেনি।

মমতা ব্যানার্জি ওই সময়ে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও তিনি সফরসঙ্গীর তালিকা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। তারপর ভারতের তরফে বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তিস্তা চুক্তি এখনো সম্পাদন হয়নি।