দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:দায়িত্ব নেওয়ার ১৩ মাসের মাথায় নিজের মতো করে কাজ করতে না পারায় পদত্যাগ করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভুঁইয়া।

 

মঙ্গলবার (২৩আগস্ট) ই-মেইলে ডিএসইর চেয়ারম্যানের কাছে তার পদত্যাগ পত্র পাঠান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। তিনি বলেন, ৩ বছরের জন্য ডিএসইর এমডি হিসেবে যোগদান করেন তারিক আমিন ভূঁইয়া। কিন্তু ১৩ মাস সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা সমস্যার কারণে পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করতে পারেননি। তাই পদত্যাগ করেছেন।

জানা গেছে, এমডি ও পরিচালনা পর্ষদের দূরত্বে দেশের বৃহত্তম শেয়ারবাজার ডিএসইতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানে পছন্দের কর্মকর্তাদের গণপদোন্নতি দেওয়া হলে জরুরি বৈঠক করে সোমবার তা আটকে দেয় পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু পর্ষদের সিদ্ধান্তকে পাত্তা না দিয়ে মঙ্গলবার সকালে পদোন্নতির ঘোষণা দেন তারিক আমিন।

বোর্ড সূত্র বলছে, এমডিকে নিয়ে চরম বিপাকে ছিলেন তারা। কোনো এক অদৃশ্য কারণে কাউকে তোয়াক্কা করছেন না এ কর্মকর্তা। ফলে চাকরিতে যোগদানের এক বছর পার হলেও তার কনফারমেশন (চুক্তি চূড়ান্তকরণ) দিচ্ছে না পর্ষদ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএসই। বর্তমানে এখানে তিন শতাধিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত। ফলে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের সংকট তৈরি হলে পুরো বাজারে এর প্রভাব পড়বে।

এ ব্যাপারে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনূসুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির ব্যাপারে এমডির সিদ্ধান্ত যথাযথ হয়নি। এ কারণে আমরা জিএম ও এর ওপরের পদোন্নতি বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। এরপর তিনি কী করেছেন তা আমরা জানি না। আগামী বৈঠকে তার কাছে বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চাইব। সেক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন বা অনিয়ম পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এর আগেই পদত্যাগ করলেন এমডি।

জানা গেছে, এ নিয়ে পরপর ৫ জন এমডি পদত্যাগ করলেন। এর আগে পর্ষদের আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে গত বছরের ২১ অক্টোবর পদত্যাগ করেন কাজী ছানাউল হক। এর ২০১২ সালের ২৮ মে পদত্যাগ করেন তৎকালীন ডিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোশাররফ হোসেন।

তবে বাজারে খারাপ সংবাদ যাবে এই বিবেচনায় ওই সময়ে পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হয়। এছাড়াও শেয়ারবাজার নিয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের রিপোর্টে সহায়তা করায় ২০১১ সালে তৎকালীন সিইও সতীপতি মৈত্রকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এর নিয়োগের ৫ মাসের ব্যবধানে ২০০৯ সালে তৎকালীন সিইও শরীফুল ইসলামকেও পদত্যাগ করতে হয়।

জানা গেছে, ডিএসইর ৯৫ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সোমবার চিঠি ইস্যু করা হয়। এরমধ্যে ডিজিএম থেকে সিনিয়র জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু নিয়ম অনুসারে জিএম এবং এর ওপরে পদোন্নতির জন্য এনআরসির (নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটি) অনুমোদন লাগে। এই অনুমোদন না থাকায় সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত পর্ষদের সভায় জিএম ও সিনিয়র জিএমদের পদোন্নতি বাতিল করতে বলা হয়। কিন্তু তা বাতিল না করে মঙ্গলবার সকালেই জিএম পদোন্নতির ঘোষণা দেওয়া হয়। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি পর্ষদ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটিতে এর আগে কখনো এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়নি। ডিএসইতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ আরএডি বা রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট। বর্তমানে ওই ডিপার্টমেন্টে জিএম (মহাব্যবস্থাপক) অথবা ডিজিএম (উপমহাব্যবস্থাপক) নেই। এ ছাড়া ফাইন্যান্স ডিভিশনে জিএম বা ডিজিএম নেই। এখানে গুরুত্ব না দিয়ে অন্য জায়গায় জনবল জড়ো করেছেন তারিক আমিন ভূঁইয়া। অন্যদিকে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই নতুন একটি ডিভিশন করেছেন স্ট্যাটেজিক প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট বা এসপিএম। সেখানে নিয়োগ কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে নিজের পছন্দের দুইজনকে বাইরে থেকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে এর আগে চিফ অপারেটিং অফিসারের (সিওও) আন্ডারে ছিল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট বিভাগ। বর্তমানে সেই বিভাগ ভেঙে চিফ অপারেটিং অফিসারকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও তারিক আমিন ভূঁইয়া মাত্র একজনের জন্য লিস্টিং অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নামে একটি বিভাগ খুলেছেন। আর মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে তাকে ডিজিএম থেকে জিএম করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে ওই কর্মকর্তাকে আরএডি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ সিদ্ধান্তে এমডির সঙ্গে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এবং প্রধান টেকনোলজি অফিসারের (সিটিও) সঙ্গে বিরোধিতা হচ্ছে।

নিয়ম অনুসারে চাকরিতে যোগদানের মধ্যে কনফারমেশন দেওয়া হয়। কিন্তু অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও তাকে এখনো কনফারমেশন দেওয়া হয়নি। গত ১৮ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ৫০ জনের একটি টিম নিয়ে সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে যান তারিক আমিন ভূঁইয়া। এখানে ডিএসই থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করা হয়। সূত্র বলছে, ছুটি কাটাতে আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়াতে যাচ্ছেন এমডি। এর আগেই পছন্দের কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রমোশন দিলেন।