দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মালয়েশিয়ার বহুল আলোচিত ওয়ান এমডিবি দুর্নীতির মামলার চূড়ান্ত আপিলে হেরে যাওয়ায় দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ১২ বছরের কারাদণ্ডের সাজা বহাল রেখেছেন সুুপ্রিম কোর্ট। 

তাৎক্ষণিকভাবে এই সাজা কার্যকরে মঙ্গলবারই তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ এই আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ২১ কোটি রিংগিত (৪৪৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা) জরিমানাও করা হয়েছে।

এর আগে, ২০২০ সালে মালয়েশিয়ার একটি নিম্ন আদালত অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগে নাজিব রাজাককে এই সাজা দিয়েছিলেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবারের রায়ে শীর্ষ আদালত নাজিবের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মালয়েশিয়ার প্রধান উন্নয়ন তহবিল ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ (ওয়ান এমডিবি) থেকে অবৈধভাবে ৪৫০ কোটি ডলার সরানোর অভিযোগ রয়েছে নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা সেই চুরি যাওয়া টাকার একটি অংশ উদ্ধার করেছেন; যার পরিমাণও ১০০ কোটি ডলারের বেশি।

মামলার তদন্তে দেখা গেছে, যেসব ব্যাংক হিসাব থেকে এই ডলার উদ্ধার হয়েছে, সেসব হিসাব নাজিব রাজাকের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। প্রথম যখন এই কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়, তখন পুরো বৈশ্বিক রাজনীতিতে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম চুরি’ বলে আখ্যা দেয়।

৬৯ বছর বয়সী নাজিব রাজাক অবশ্য বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। এমনকি মঙ্গলবার রায় ঘোষণার আগেও আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নাজিব বলেন, তিনি বিরোধীদের ষড়যন্ত্র ও অবিচারের শিকার।

তবে তার এই দাবিকে আমলে না নিয়ে প্রধান বিচারপতি টেংকু মাইমুন তুয়ান মাত রায় ঘোষণার সময় বলেন, ‘মামলার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বাদিপক্ষ যেসব তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করছে, তাতে অভিযোগের সত্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আদালত আরও বলেছেন, দেশের প্রচলিত আইন মেনেই এই রায় ঘোষণা করা হচ্ছে, (অভিযুক্তকে) অতিরিক্ত কোনো সাজা দেওয়া হচ্ছে না।’

যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া নাজিব রাজাক মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থ সরানোর কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়, যার জেরে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় ঘটে নাজিবের।