তারেক রহমানও ‘আয়নাঘর’ এর একজন ভিকটিম
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ‘আয়নাঘর’ এর একজন ভিকটিম।
তিনি বলেছেন, ‘এই আয়নাঘর নামের টর্চার সেলে নিয়ে যাদের মেরে ফেলতে হয়, তাদের মেরে ফেলা হয়। আর যাদের রেখে দিতে হয়, তাদের টর্চার করে, বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়।’
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘ভোলায় নুরে আলম শহীদ হয়েছেন, আবদুর রহিম শহীদ হয়েছেন। এটা গত এক যুগ ধরে চলে আসছে। আজকে আমার মনে হয়, এ দেশে গণতন্ত্র চায়-এ ধরনের কোনো মানুষই আর নিরাপদ নয়।
আমাদের ছয় শতাধিক মানুষ গুম হয়ে গেছে। এমপি ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলম, লাকসামের এমপি হিরুর ৯-১০ বছর ধরে কোনো খবর নেই।’
এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নেত্র নিউজের ‘আয়নাঘর’ তথ্যচিত্র প্রকাশ হওয়ার কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, তারা তুলে নিয়ে যায়। দেখেছেন, নেত্র নিউজে যে খবর বেরিয়েছে, সেখানে টর্চার সেল আছে। তারা সেটির নাম দিয়েছে আয়নাঘর।’
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে তারা আট থেকে দশ বছর ‘আয়নাঘর’–এ আটক আছেন। যারা সৌভাগ্যক্রমে বেরিয়ে যেতে পেরেছেন, তারা অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। সেখান থেকে তারা বলছেন, এ ধরনের একটা সেলে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে বলেছেন যে “আমিও একজন সেখানকার ভিকটিম।” ওয়ান ইলেভেনের সময় তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন রিমান্ডের নাম করে নিয়ে আসা হয়েছিল। এমন টর্চার করা হয়েছিল যে তার কোমর ভেঙে গিয়েছিল।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কথা দিতে পারি, আমরা যদি সরকারকে পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, সত্যিকারের জনগণের পার্লামেন্ট আনতে পারি, তাহলে এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন; তাদের পরিবারকে পুনর্বাসনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এত নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, গুম ও খুনের পরও বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিএনপি সেই ফিনিক্স পাখির মতো আবার ধ্বংসাবশেষ থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। এটাই হচ্ছে রাগের সবচেয়ে বড় কারণ, ভয়ের কারণ। সমস্যাটা এ জায়গায় শেখ হাসিনার, আওয়ামী লীগের।’
গতকাল ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গতকাল থেকে নতুন করে গ্রামপর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে। গোটা দেশের মানুষ দেখছে যে মানুষ কীভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে। প্রতিটি থানা-উপজেলায় বড় বড় মিছিল হয়েছে। এর মধ্যেও তারা (আওয়ামী লীগ) থেমে নেই। গতকাল তারা লক্ষ্মীপুরে আক্রমণ করেছে। গৌরনদীতে ছাত্রদল, যুবদল, বিএনপির নেতাদের ঘর থেকে বের করে এনে মারধর করেছে।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়াকে গতকাল হাসপাতালে যেতে হয়েছে পরীক্ষার জন্য। এখন তিনি কারান্তরীণ না হলেও গৃহে অন্তরীণ অবস্থায় আছেন। কালকেও চিকিৎসকেরা বলছিলেন চিকিৎসার জন্য তার বাইরে যাওয়া দরকার। কিন্তু এ সরকার তাকে বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না, বেরোতে দিতে চায় না।
কেন খালেদা জিয়াকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, প্রশ্ন তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) যদি বেরিয়ে আসেন, তাহলে সরকার তাকে সামাল দিতে পারবে না। তারেক রহমান যদি দেশে আসেন, তাহলে এখানে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। এই ভয়েই তারা সেটা করতে চায় না।