দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কর্মবিরতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অবশেষে কাজে ফিরেছেন মৌলভীবাজারের চা শ্রমিকরা। আর সিলেটের শ্রমিকরা সকালে বৈঠকে বসেছেন। বৈঠকের পর তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন।

 

:

এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও মৌলভীবাজারের কিছু কিছু চা-বাগানের শ্রমিকরা কাজে নেমেছেন। তবে আজ সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে অনেক বাগানেই চা-শ্রমিকরা কাজে নামেননি।

রোববার (২৮ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকেই ভাড়াউড়াসহ একাংশ চা-বাগানে‌ই চা শ্রমিকরা কাজে নেমেছেন। চা-শ্রমিকরা কাজে নামলেও নতুন ১৭০ টাকা মজুরির ঘোষণার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে চা-শ্রমিকদের মধ্যে।

ভাড়াউড়া চা-বাগানের শ্রমিক দুলাল হাজরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমরা তা-ই মেনে নিয়েছি। আমরা এখন বাগানের জন্য কাজ করব। যদিও ১৭০ টাকায় আমাদের এই সময়ে চলাফেরা কষ্ট হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাই আমরা কাজে নেমেছি।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমরা তা মেনে নিব। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে বসে মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। তাই আমরা আজ থেকেই কাজে নেমেছি।

ফিনলে চা কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, আমাদের চা বাগানের শ্রমিকরা সবাই কাজে নেমেছেন। সবাই কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চা-শ্রমিকরা নতুন মজুরি ১৭০ টাকা পাবেন। এ ছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী তাদের পেছনে বাগানের দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হবে।

প্রসঙ্গত, দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে শ্রমিকের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। বর্তমানে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শ্রমিকরা। গত ৯ আগস্ট এ আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতে প্রথম কয়েকদিন কেবল ৪ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হয়। সে সময় মজুরি বৃদ্ধি ও মজুরি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

কিন্তু মালিক পক্ষ এ সময়ের মধ্যে বৈঠক বা সমঝোতায় না আসায় ১৩ আগস্ট থেকে লাগাতার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সমাধান হচ্ছিল না। সবশেষ ২৭ আগস্ট রাতে প্রধানমন্ত্রী বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নতুন মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেন। এরপরে কাজে ফেরার আশ্বাস দেন চা-শ্রমিকরা।

সিলেটে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত:সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিক সুদীপ বাড়ৈ বলেন, ‘আমরা এখন কাজে যোগ দিইনি। এখন বৈঠক করছি। এরপর সিদ্ধান্ত জানাব।’

গণভবনে শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকপক্ষের বৈঠক হয়। এতে শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই সময় প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের রোববার থেকে কাজে ফেরার আহ্বান জানান।

৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে চারদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করে আসছিলেন চা শ্রমিকরা।

এমন বাস্তবতায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও তা মেনে নেননি সাধারণ চা শ্রমিকেরা। আন্দোলন সফল করতে সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ অবরোধ করতে দেখা যায় তাদের।