মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট : গেলো সপ্তাহের শেষে বাংলাদেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইতে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৪০ কোটি ৩৭ লাখ ২১ হাজার টাকা। যেখানে সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৮ হাজার ১০৯ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ওই সময়ের ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ১৩১ কোটি ১৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা।

এ সময়ে দেশের জিডিপির পরিমাণ ছিলো ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। যা টাকার অংকে দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। জিডিপির মাত্র ১১.৫০ শতাংশ ডিএসইর বাজার মূলধন।

উল্লেখ্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানীর লেনদেন হওয়া শেয়ারমূল্যকে বাজার মূলধন হিসেবে গণনা করা হয়। জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন হল একটি দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের পরিমাপক। জিডিপির মাধ্যমে একটি দেশের অর্থনীতির দৃশ্যপট ভেসে ‍উঠে। শেয়ারবাজারে যে দেশে যত বেশী তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্য বেশী সেদেশের বাজার মূলধন ততো বেশী। উন্নত বিশ্বে ব্যাংকের ঋণ গ্রহণ না করে পুজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহের হার বেশী। সে কারণে সেসব দেশ ততো উন্নতির দিকে এগিয়ে গেছে।

বাংলাদেশে জিডিপি ও বাজারমূলধনের যখন এই অবস্থা তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর দিকে তাকালে কী দেখা যায়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি বাংলাদেশী টাকায় ২৩ হাজার ১৭ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার মার্কেটের বাজার মূলধন দেশটির জিডিপির ১৬৮ শতাংশ। যা টাকার হিসেবে দাঁড়ায় ৩১ লাখ ৬৫৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।

কানাডার জিডিপি থেকে শেয়ার মার্কেটে মূলধন প্রায় ১৪৩ শতাংশ বেশি। কানাডার জিডিপির পরিমাণ ১৮৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। পক্ষান্তরে শেয়ার মার্কেটে মূলধনের পরিমাণ ২৬৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বর্তমান জিডিপির পরিমাণ ২৮৪ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। পক্ষান্তরে শেয়ার মার্কেটে মূলধনের পরিমান ২৬০ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা যা জিডিপির ৯৭ শতাংশ।

ব্রিটেনে বাজার মূলধন দেশটির জিডিপির তুলনায় ১০১ শতাংশ বেশি । ব্রিটেনে জিডিপির পরিমাণ ২৬৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।পক্ষান্তরে দেশটির শেয়ার মার্কেটে মূলধনের পরিমাণ ২৭২ লাখ ৫২ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা।

জিডিপি থেকে সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধন হচ্ছে হংকং এর । দেশটির জিডিপি ৩৫ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। পক্ষান্তরে ৩৩৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা হচ্ছে দেশটির বাজার মূলধন।

এবার দেখে আসি জিডিপি বলতে কী বোঝায়? জিডিপির প্রথম মৌলিক ধারণাটি আঠারো শতকের শেষে উদ্ভাবিত হয়েছিল। তবে, জিডিপির আধুনিক ধারণাটি ১৯৩৪ সালে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ সাইমন কুজনেটস দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, ১৯৪৪ সালে ব্রেটন উডস সম্মেলনে জিডিপিকে একটি দেশের অর্থনীতির প্রধান পরিমাপ হিসাবে গ্রহণ করা হয়।GDP-এর পূর্ণরুপ হল "Gross Domestic Product'', অর্থাৎ মোট দেশজ উৎপাদন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (সাধারণত ১ বছর) একটি দেশের মধ্যে উৎপাদিত (এবং বাজারে বিক্রি হওয়া) সমস্ত পণ্য ও পরিষেবার মোট আর্থিক মূল্যেকে জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন বলে। কোনো একটি দেশে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদিত অথবা তৈরীকৃত মোট পণ্য এবং সেবার সমষ্টিকেই জিডিপি বলে। জিডিপি পরিমাপে সাধারণত তিনটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো হলো আয়, ব্যয় এবং উৎপাদন পদ্ধতি। একটি দেশে উৎপাদিত সকল পণ্য এবং সেবার মোট বাজার মূল্যকে একত্রিত করার মাধ্যমে উৎপাদন পদ্ধতিতে জিডিপি নির্ধারণ করা যেতে পারে।

ধরি,কোনো এক বছরে বাংলাদেশে মোট ১০০ কিলোগ্রাম চাল উৎপাদন হয়। প্রতি কেজি চালের বাজার মূল্য ৫০ টাকা। ওই বছরেই বাংলাদেশে আরও ২০০ কিলোগ্রাম গম উৎপাদন হলো এবং প্রতি কেজি গমের বাজার মূল্য ৩০ টাকা। সুতরাং, ওই বছরে বাংলাদেশের জিডিপি হবে, = (১০০×৫০)+(২০০×৩০)= ১১,০০০ টাকা এবার ধরা যাক, ওই বছরে পুরো বাংলাদেশের মোট প্রয়োজন যথাক্রমে ১৫০ কিলোগ্রাম চাল এবং ২৫০ কিলোগ্রাম গম। তাই প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে ৭৫ টাকা দরে ৫০ কেজি চাল এবং ৪০ টাকা দরে ৫০ কেজি গম আমদানি করলো। তাহলে ওই বছর বাংলাদেশের চূড়ান্ত GDP হবে, = ১১,০০০ - {(৫০ × ৭৫) + (৫০ × ৪০)}= ১১,০০০ - ৫৭৫০= ৫২৫০ টাকা সুতরাং, এটা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্যের বাজার দরের উপর জিডিপি নির্ভর করে না, বরং অনেকটাই বিদেশ থেকে আমদানি পণ্যের উপরেও নির্ভর করে।

অন্যদিকে , বাজার মূলধন বলতে বোঝায় ডিএসইতে লেনদেন হওয়া সবকটি শেয়ারের মূল্যকে। গত দুই সপ্তাহ ধরে যা বাড়ছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদের সাথে।তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো হবে এই ব্যবধান কমে আসলে।উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে জিডিপির থেকে পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন বেশি থাকে বলে তিনি জানান। পুঁজিবাজারের এই বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চাওয়া বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারমুখী করতে কি কি করণীয় বলে তিনি মনে করে। উত্তরে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকেবিনিয়োগসীমা হিসেবে নির্ধারণকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন এর ফলাফল বর্তমানে পাচ্ছে পুঁজিবাজার। যার প্রমান আজকের রবিবারের ২ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন।

প্রসঙ্গত,সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। আজ ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেনও বেড়েছে বড় ব্যবধানে। এদিন ডিএসইতে ১১ মাস পর লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়াল।এর আগে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর ডিএসইতে ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।জানা গেছে, ডিএসইতে ২ হাজার ১০৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিনের তুলনায় আজ ডিএসইতে ৩২৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৪০১ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক দশমিক ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে। ডিএস৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৭১পয়েন্টে।আজ ডিএসইতে ৩৮২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২১৯টির, কমেছে ১০২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬১টির।।