বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি চলবে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দলীয় নেতা নূরে আলম ও আবদুর রহিম নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশে বিএনপির যে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে তা আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, চাল-ডাল-তেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভোলায় আমাদের ছাত্রদল নেতা নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আমরা সারাদেশের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা ও জেলা পর্যায়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছি। এই প্রতিবাদ আন্দোলনে সারাদেশের জনগণের মধ্যে একটি অভূতপূর্ব সারা সৃষ্টি করেছে। ভয়াবহ, কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী, অত্যাচারী, নির্যাতনকারী সরকারের দুঃশাসনের ফলে সমগ্র দেশের মানুষ যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তারই প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমে এসেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে মানুষ বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন। লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ হচ্ছে এই সরকারের বিরুদ্ধে। এতে সম্পূর্ণভাবে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী চরিত্র আরও একবার উদ্ভাসিত হয়েছে। আমি সব সময় বলি আওয়ামী লীগের বডি ক্যামিস্ট্রির মধ্যেই সন্ত্রাস আছে। রাজনৈতিকভাবে তারা দেউলিয়া হয়ে বলপ্রয়োগ ছাড়া তাদের টিকে থাকার আর কোনো অবস্থা নেই।
তিনি বলেন, এই সরকারের দেশ শাসন করার যে পদ্ধতি তাকে আমরা যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ দেখেছি তারা বলতে পারি একমাত্র পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গেই তাদের তুলনা করা যায়। অর্থাৎ কোনো নিয়মকানুন, আইন, দায়বদ্ধতা কিছু নেই। যাকে যখন ইচ্ছা তুলে নিয়ে গেল। হত্যা, খুন, জখম, গুমের মধ্য দিয়ে দেশকে তারা শাসন করার চেষ্টা করছেন। গতকাল পত্রিকায় দেখেছেন যশোরে আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও তার মা যশোরে থাকেন। তাদের বাড়িতে রাতে গাড়ি-মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়ে চারদিক থেকে কা-পুরুষের মতোহামলা চালিয়েছে। পরের দিন জামিন নেওয়ার জন্য আদালতে গিয়েছিল সেখানেও গাড়ির ওপরে হামলা করা হয়। আল্লাহর অশেষ কৃপায় সে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। একইভাবে মন্সীগঞ্জেও আমাদের সদস্য সচিবকে নির্যাতন করেছে। এগুলো প্রায় সব জায়গায়।
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাদেশের হামলার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলে এ পর্যন্ত ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আহত হয়েছে ৭৭৫ জন ও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বললেন কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। সভাসমাবেশ করতে দেওয়া হবে। ঠিক তার উল্টোটা তারা এখন করছেন। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। তারা কথা বলবেন একটা আর কাজ করবেন আরেকটা। এভাবেই তারা এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের যে প্রতিবাদ কর্মসূচি সেটা আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। যেসব থানা উপজেলায় কর্মসূচি হয়নি সেগুলোতে হবে। এরমধ্যে আগামী ৩০ আগস্ট সারাদেশে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে সারাদেশে আন্তর্জাতিক দিবস পালন করবো। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে পালন করবো। অন্যদিকে ১ সেপ্টেম্বর আমাদের (বিএনপির) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সারাদেশে পালিত হবে। এ উপলক্ষে আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আলোচনাসভা হবে। ১০ সেপ্টেম্বরের পরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে জামায়াতের জোট ছাড়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব আগেই বলেন, প্রশ্ন করে লাভ নেই। কারণ আমি উত্তর দেব না। আমি জানি আপনারা কি প্রশ্ন করবেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমারও গণতান্ত্রিক অধিকার আছে উত্তর না দেওয়ার। একথা বলেই তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে যান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।