দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের সব মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একগুচ্ছ লিখিত নির্দেশনা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

‘বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণ’ শিরোনামে ওই নির্দেশনায় ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।

নির্দেশনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-অর্থবছরের শেষে মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে বিল পরিশোধের চাপ সৃষ্টি না করা। এজন্য বছরের শুরুতে মেরামত ও সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এমনভাবে শুরু করতে বলেছে যেন প্রতি কোয়ার্টারে কাজের বিল ভারসাম্যপূর্ণভাবে পরিশোধ করা যায়। এছাড়া প্রতিমাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে সব ধরনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ইআরডি সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের সম্ভাব্য অঙ্ক তুলে ধরে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের। আর বিগত তিন অর্থবছরের (২০১৯-২০২২) বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রম শেষ করতে একটি ‘বাস্তবায়ন পরিকল্পনা’ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বাজেট নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ করলে অপরিকল্পিতভাবে সরকারের ঋণ গ্রহণ এড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণজনিত ব্যয় হ্রাস করা যাবে। এখন থেকে বাজেটের অর্থ খরচের ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক (কোয়ার্টারভিত্তিক) ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে।

এদিকে ৮ সেপ্টেম্বর এ নির্দেশ জারির দুদিন পর ১০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ২০২২ ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ সরকার আর্থিক স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে ন্যূনতম মানদণ্ডে পৌঁছাতে এখনো ঘাটতি রয়েছে। মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বাজটের আয় ও ব্যয়ে এখনো স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।

এবিষয়ে অর্থ বিভাগের বাজেট প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বছরের শেষদিকে এটি বেড়ে যায়। ফলে স্বল্প সময়ে অধিক টাকা খরচ করতে গিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম ও কাজের গুণগতমানও ভালো হয় না। এ সংস্কৃতি থেকে মন্ত্রণালয়গুলোকে বের করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য বাজেটের অর্থব্যয়, রাজস্ব আহরণ ও বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের জন্য আলাদা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া চাকরিজীবীদের বেতনভাতায় যে অর্থব্যয় হবে, সেটি কোয়ার্টারভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির আর্থিক সংশ্লেষ বিবেচনায় রাখতে বলা হয়।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরে সরকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। এর সময়মতো ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সূত্র আরও জানায়, মন্ত্রণালয়গুলোর উদ্দেশে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, পরিকল্পিতভাবে অর্থব্যয় না হওয়ায় বছর শেষে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগতমান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। কারণ বছরের শুরুতে বাজেট বাস্তবায়ন হার থাকে ধীরগতি। নির্ধারিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ সময় কম আহরণ হয়। তেমনই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণও বেশি হয় না। কিন্তু শেষদিকে এসে দেখা যায়, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মালামাল কেনা ও সংগ্রহের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর ফলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ২০১৯-২০২০ থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেটে ঘোষিত কার্যক্রমের মধ্যে অধিকাংশ ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে কিছু কার্যক্রম এখনো বাস্তবায়নাধীন আছে। চলতি বাজেটেও কিছু কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থবছরের শুরুতে সুনির্দিষ্ট ও সময়নিষ্ঠ পরিকল্পনা প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে গ্রহণ করা প্রয়োজন।