দেশি প্রতিষ্ঠানের বিদেশি এমডির উপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিদেশী বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান রাকিন ডেভেলপমেন্টে সন্ত্রাসী হামলা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট এবং প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাদি বিতার (লেবানিজ বংশোদ্ভুত সুইজারল্যান্ডের নাগরিক) ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করার অভিযোগ করা হয়েছে।
বুধবার (০৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাদি বিতার।
তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগে (এফডিআই) বাংলাদেশের আবাসন খাতে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। এ প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে রাজধানীর মিরপুরে ‘রাকিন বিজয় সিটি’ নামে একটি মেগা আবাসন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। এছাড়াও কাঁচপুরে ‘রাকিন ট্রাঙ্কুল টাউন’ নামে আরও একটি মেগা আবাসন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর বাইরে অদূর ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।
ফাদি বিতার জানান, ২০০৮ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এ কে একরামুজ্জামান। কোম্পানি আইনের ১১০(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়ার পর পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সেটার অনুমোদন নিতে হয়। কিন্ত ২০০৮ থেকে ২০২২ সালে তাকে অব্যাহতির আগ পর্যন্ত এ ধরনের কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি, তাই আইনের ধারা অনুযায়ী তার এই পদ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছরধরে অবৈধভাবে তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।
তিনি বলেন, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই এস এ কে একরামুজ্জামান কোম্পানির সম্পত্তি বন্ধক রেখে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তাছাড়াও তিনি কোম্পানির নামে কয়েকটি অনুমোদনহীন ব্যাংক হিসাব খুলে সেগুলোতে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের অনুমতি ছাড়া কোনধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ‘স্টার পোরসেলিন’ নামে একটি কোম্পানির নামে ৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন একরামুজ্জামান, যিনি একই কোম্পানির ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। এই টাকা ৭ দিনের মধ্যে পরিশোধের জন্য চলতি বছরের ৩ আগস্টে তাকে একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি এই নোটিশের কোন জবাব দেননি। একরামুজ্জামানের ১৪ বছরধরে এমডি’র দায়িত্ব পালনকালে এই সময়ে কোম্পানির কোন লাভ দেখানো হয়নি, বরং প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।
ফাদি বিতার বলেন, বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন না থাকা, কোম্পানির কার্যক্রমে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন, কোম্পানিতে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতি এবং তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার কারণে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কোম্পানির ৮১তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তক্রমে এস এ কে একরামুজ্জামানকে সরিয়ে আমাকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সাথে কোম্পানির আর্টিক্যাল অব অ্যাসোসিয়েশনের ১১৫ নম্বর সেকশন অনুযায়ী একরামুজ্জামানকে কোম্পানির পরিচালক পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এস এ কে একরামুজ্জামানের ভাই কোম্পানীর পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডার আনোয়ারুজ্জামান ঐ বোর্ড সভায় উপস্থিত থেকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ফাদি বিতারকে স্বাগত জানান। এসব কার্যক্রম ভিডিওতে ধারণ করা আছে।
তিনি বলেন, কোম্পানির নতুন এমডি দায়িত্ব নিয়ে দেখতে পান আগের এমডি একরামুজ্জামান কোম্পানীর প্রচুর পরিমান অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে খরচ করেছেন। কোম্পানীকে সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহিতায় আনতে এবং এখানে গ্রাহকদের অর্থ বিনিয়োগকে নিরাপদ করতে ফাদি বিতার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এতে একরামুজ্জামান নাখোশ ও ক্ষিপ্ত হন। তার অনিয়মগুলো প্রকাশ্যে আসার পর আমাকে সঠিকভাবে দায়িত্বপালনে বিভিন্ন উপায়ে বাঁধা শুরু হয়।
এরপর বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম আর অসঙ্গতির অভিযোগে চলতি বছরের ৩১ জুলাই ও ০৩ আগস্ট তারিখে একরামুজ্জামানকে কোম্পানির পক্ষ থেকে দুটি লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি এর কোনটিরই জবাব দেননি।
ফাদি বিতার বলেন, কোম্পানির ফান্ড থেকে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক হিসাব খোলার অভিযোগে ইতিমধ্যেই কোম্পানির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে একটি ফোজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং বিভিন্ন অভিযোগে আরও কয়েকটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। এই পরিস্থিতিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় সাবেক এমডি এস এ কে একরামুজ্জামানের নেতৃত্বে রাশেদুল আলম, আরিফুর রহমান তপন, আবদুল্লাহ কায়সার ও সোহাগ-সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০ থেকে ৩০ জনের বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির রাজধানীর মিরপুরস্থ কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাকে এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে। আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ ঘন্টা ধরে আটকে রেখে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট ও তছনছ করে এবং জোর করে অফিস বেদখল করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাশেদুল আলম ও আরিফুর রহমান তপন আমাকে ও সুমাইয়া তাসনীনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং শারীরিকভাবে আঘাত করে পদত্যাগ সংক্রান্ত একটি বেআইনি চিঠিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তারা আমাকে ও সুমাইয়া তাসনীনের কক্ষে প্রবেশ করার আগে অফিসের সকল সিসি টিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়। এই ঘটনার পর একজন বিদেশী নাগরিক হিসাবে আমি ও একজন নারি হিসাবে সুমাইয়া তাসনীন এবং তাদের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি, মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, দেশে যদি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কোন নিরাপত্তা না থাকে তাহলে বিদেশী বিনিয়োগ আরও হুমকির মুখে পড়বে। আমরা সরকারের মন্ত্রী পর্যায় থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও ঠিকভাবে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিনা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকার পরও সহায়তা করতে গড়িমশি করছে স্থানীয় প্রশাসন। এই ঘটনার সাথে দেশের ভাবমূর্তি, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিদের নিরাপত্তার মতো বিষয় জড়িত বিধায়, এ বিষয়ে দ্রুততার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীন বলেন, আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, যথাযথ বিচার, আইনি সুরক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা দাবি করছি। পাশাপাশি আমি আমার প্রতিষ্ঠানের বেদখল হওয়া অফিস পূনরুদ্ধারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংগঠন ও নারি অধিকার সংগঠনগুলোর সুদৃষ্টি আশা করছি। এই ঘটনার সাথে নারিদের নিরাপত্তা, দেশের ভাবমূর্তি, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিদের নিরাপত্তার মতো বিষয় জড়িত বিধায় এ বিষয়ে দ্রুততার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রতিষ্ঠানের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইকরাম হোসেন