৩৮ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল কিনবে বিপিসি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য ৩৮ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা করেছে। সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এই জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে।
জানা গেছে, দেশে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলের ওপর অনেকটা নির্ভর করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বিপিসি জরুরি/আকস্মিক বর্ধিত চাহিদা মেটাতে চাহিদার অতিরিক্ত জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। বিপিসির পরিকল্পনার মধ্যে ২৬,৭০,০০০ মেট্রিক টন ৫০ পিপিএম সালফার মানমাত্রার গ্যাস অয়েল (ডিজেল), ৩,৫০,০০০ মেট্রিক টন জেট এ-১ (এভিয়েশন ফুয়েল), ৩,০০,০০০ মেট্রিক টন মোগ্যাস (অকটেন), ৪,৫০,০০০ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ১৮০ সিএসটি এবং ৯০,০০০ মেট্রিক মেরিন ফুয়েল আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিপিসি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সালে থেকে জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ জি-টু-জি বা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে শুধু তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পূর্বানুমোদন নিয়ে এবং বাকি ৫০ শতাংশ উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে আমদানি করে আসছে।
কোভিড পরিস্থিতি উন্নতির ফলে ২০২৩ সালে এ বছরের তুলনায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল ও জ্বালানি তেলের চাহিদার বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) আমদানি করে স্থানীয়ভাবে ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) প্রক্রিয়াকরণ করে জ্বালানি তেলের আংশিক চাহিদা পূরণ করা হয়। বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত বিভিন্ন ক্রুড অয়েল ও ক্যাটালাইটিক রিফর্মিং ইউনিট (সিআরইউ) বিশিষ্ট ফ্র্যাকশনেশন প্ল্যান্টগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাঁচামাল হিসেবে ন্যাফথা/কনডেনসেট/ক্রুড অয়েল আমদানির অনুমতি প্রাপ্তি সাপেক্ষে স্থানীয় উৎস থেকে প্রাপ্ত জ্বালানি তেলের পরিমাণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া, বিভিন্ন নন ক্যাটালাইটিক রিফর্মিং ইউনিট বিশিষ্ট ফ্র্যাকশনেশন প্ল্যান্টগুলো চালু হলে স্থানীয়ভাবে কিছু পরিমাণ জ্বালানি তেল পাওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, বিগত সময়ে জ্বালানি তেলের চাহিদা ও বিক্রয় প্রবণতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা অপ্রত্যাশিত কম-বেশি হয়। সাম্প্রতিক সময়ে (২০২২ সালের আগস্ট-অক্টোবর) বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের চাহিদা অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাপক পরিমাণ বেড়েছে। এ ধরনের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নিরাপদ সরবরাহ ধারা বজায় রাখার জন্য ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষে প্রাক্কলিত পরিমাণের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানির অনুমোদন নেওয়া হয়। এ ধারাবাহিকতায় ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষেও প্রাক্কলিত পরিমাণের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিতব্য সময়ে জি-টু-জি ভিত্তিতে নেগোসিয়েশনকৃত প্রিমিয়াম অথবা কোটেশন ভিত্তিতে আমদানি করা হবে।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে ৫০ শতাংশ হিসেবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গ্যাস অয়েল আমদানি করা হবে ২৪,০০,০০০ মেট্রিক টন, জেট এ-১ ৩,০০,০০ মেট্রিক টন,মোগ্যাস বা অকটেন ১,৭৫,০০০ মেট্রিক টন,ফর্নেস অয়েল ২,৫০,০০০ মেট্রিক টন এবং মেরিন ফুয়েল ৬০,০০০ মেট্রিক টন।
অন্যদিকে, একই সময়ের জন্য ৫০ শতাংশ হিসেবে জি-টু-জি ভিত্তিতে আমদানিতব্য পরিমাণ ২৪,৩০,০০০ মেট্রিক টন, জেড এ-১ ৩,০০,০০০ মেট্রিক টন, মোগ্যাস (অকটেন) ১,৭৫,০০০ মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েল ২,৫০,০০০ মেট্রিক টন এবং মেরিন ফুয়েল ৬০,০০০ মেট্রিক টন।
উল্লেখ্য, কেরোসিন ও পেট্রোলের চাহিদা ইআরএল ও স্থানীয় উৎস থেকে পূরণ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী দেশে পেট্রোলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য ইআরএল-এ আমদানি করা মোগ্যাস (অকটেন) ব্লেন্ডিং করে পেট্রোল উৎপাদন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।