সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে মৃত্যু বেড়ে ৩২
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে গাছ চাপা, দেয়াল ধস ও নৌকা ডুবে এখন পর্যন্ত রাজধানীসহ ১৪ জেলায় ৩২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। সেখানকার সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও ঢেউয়ে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
সন্দ্বীপ চ্যানেলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও ঢেউয়ে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এছাড়া ভোলায় ৪ জন, টাঙ্গাইলে ৩ জন, কুমিল্লায় ৩ জন, নড়াইল ১ জন, বরগুনায় ১ জন, সিরাজগঞ্জে ২ জন, গোপালগঞ্জে ২ জন, নোয়াখালীতে ১ জন, শরীয়তপুরে ১ জন, কক্সবাজারে ২ জন, পটুয়াখালীতে ১ জন, গাজীপুরে ১ জন ও মুন্সিগঞ্জে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় মৃতদের খবর:
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার ড্রেজার ডুবে আট শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের ৩ নম্বর জেটি এলাকার পশ্চিমে এ ড্রেজারডুবিতে তাদের মৃত্যু হয়।
ভোলা
ঘূর্ণিঝড়ে সিত্রাংয়ে ভোলায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ভোলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে ঘূর্ণিঝড়ের দমকা হাওয়ায় গাছের চাপায় প্রাণ যায় বিবি খাদিজা (৬৮) নামের এক নারীর। চরফ্যাশন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ের সময় মোটরসাইকেলে করে দুজন যাওয়ার পথে গাছের ডাল পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. মাইনুদ্দিন (৪৫)। ভোলা সদর উপজেলার চেউয়াখালী গ্রামের মফিজুল ইসলাম (৭০) ঘরচাপায় এবং লালমোহন উপজেলার ফাতেমাবাদ গ্রামের ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (২৫) পানিতে ডুবে মারা যান।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশের দুই কনস্টেবল ও এক আসামি নিহত হয়েছেন। মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল আমীন বলেন, জামালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা দুই আসামির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির মধ্যে মাইক্রোবাসটি রাত সাড়ে আটটার দিকে গোলাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে দুই পুলিশ সদস্য কনস্টেবল নুরুল ইসলাম ও মো. সোহেল এবং আসামি লালন নিহত হন। ঘরে বৃষ্টির পানি ঢুকে তলিয়ে যাওয়া আইপিএস সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্টে মারা যান টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়া পাঞ্জাপাড়া এলাকার শরীফ ফকির।
কুমিল্লা
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা হেসাখাল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় সোমবার রাতে ঘরের ওপর গাছ পড়লে এক পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফারুক হোসেন বলেন, নিহত তিনজন হলেন নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার ও তাঁদের চার বছরের মেয়ে নুসরাত আক্তার।
নড়াইল
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে সোমবার রাতে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মারা যান মর্জিনা বেগম (৪০) নামের এক নারী। তাঁর বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামে।
বরগুনা
বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় একটি ঘরের চালে গাছ পড়লে ওই ঘরে থাকা আমেনা খাতুন নামের এক নারী মারা যান। ঘূর্ণিঝড়ে নিহত আমেনা খাতুনের বয়স ১০০ বছরের বেশি। ওই নারী রাত আটটার দিতে ঘরের ভেতর খাবার খাচ্ছিলেন। ঝড়ের সময় একটি গাছ তাঁর ঘরের ওপর পড়ে। এ সময় চাপা পড়ে তিনি মারা যান।
সিরাজগঞ্জ
প্রবল ঢেউয়ে সিরাজগঞ্জে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত নয়টার দিকে জেলা সদরের সয়দা ইউনিয়নের মোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুজন হলেন মোহনপুর গ্রামের খোকন হোসেনের স্ত্রী ও শিশুসন্তান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালী সদর উপজেলার প্রতাপপুর খেয়াঘাট এলাকায় লোহালিয়া নদীতে ইটবোঝাই ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন ট্রলারের শ্রমিক নুরুল ইসলাম (৪৫)। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালী নদী ফায়ার স্টেশনের ডুবুরিরা তাঁর লাশ উদ্ধার করেন।
গাজীপুর
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ইকুরিয়া গ্রামে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় ঘরচাপায় আনিসুর রহমান (৯) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় মাটির ঘর ধসে গিয়ে পাশের টিনের ঘরকে চাপা দেয়। এতে ওই ঘরে থাকা শিশু আনিসুরের মৃত্যু হয়।
মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবের সময় বসত ঘরে গাছ ভেঙে পড়লে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়। নিহত দুজন হলেন-উপজেলার কনকসার এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আসমা বেগম (২৮) ও তাঁর মেয়ে সুরাইয়া আক্তার (৩)।
গোপালগঞ্জ
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গাছচাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি মুহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, এই দুই নারী হলেন উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামের রেজাউল খার স্ত্রী শারমিন বেগম (২৫) ও বাঁশবাড়ির চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রোমেছা বেগম (৫৮)।
নোয়াখালী
ঝড়ের সময় রান্নাঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা গ্রামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সানজিদ আফ্রিদি নামের শিশুটির বয়স ১১ মাস। সানজিদ ওই গ্রামের বাসিন্দা আইনজীবী মো. আবদুল্লাহর ছেলে। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শরীয়তপুর
শরীয়তপুরে গাছের নিচে চাপা পড়ে সাফিয়া বেগম (৬৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি জেলার জাজিরা উপজেলার সিডারচর এলাকার হালান মুসল্লির স্ত্রী।
কক্সবাজার
কক্সবাজারের টেকনাফে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়লে ডেক থেকে পড়ে শৌমিং (৭১) নামের একজনের মৃত্যু হয়। তিনি মিয়ানমারে নাগরিক। তিনি ওই জাহাজের বাবুর্চি ছিলেন। এছাড়া ঝড়ের সময় নিখোঁজ এক শিশুর লাশ পরে টেকনাফ পৌরসভার একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। সোহেনা (৯) নামের শিশুটি টেকনাফ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা জাফর আলমের মেয়ে।