দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সমাবেশ ‘সরকারি সুবিধায়’ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।  

শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আমীর খসরু বলেন, আজকে এখানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যুবলীগের সম্মেলন আছে। আমি আসার পথে দেখলাম অনেক কিছু। আজকে বাংলাদেশে জনসাধারণের জন্য কোনো বাস আছে বলে আমার মনে হলো না, সব পরিবহন আজ ওদের দখলে, ওদের নিয়ন্ত্রণে। সব রাস্তা-ঘাট বন্ধ। এভাবে সব আয়োজন করা হয়েছে। বুঝতে পারেন একটা দলের সম্মেলন করতে তাদের এতো কিছু জোগাড় করতে হচ্ছে, সরকারি এতো কিছুর সুযোগ-সুবিধা নিতে হচ্ছে। রাস্তা-ঘাটের অবস্থা দেখে মনে হলো যে, বাংলাদেশ একটা একদলীয় শাসনের মধ্যে আছে। মনে হলো এখানে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে। এটা যে দলের অনুষ্ঠান কেউ বুঝতে পারবে না যদি তাদের বলা না হয়। কোনো বিদেশি মানুষ যদি এখানে অবস্থান করে ওরা মনে করবে যে, বোধহয় বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে। এটা কোনো দলের অনুষ্ঠান এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।

রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসির বাস ব্যবহারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং মনে হলো বিআরটিসির বাসের মধ্যে ব্যানার লাগিয়ে ওরা সম্মেলনে আসছে। লজ্জা-শরম তো থাকার কথা। না হয়, আইন মানলেন না, সংবিধান মানলেন না, গণতন্ত্র মানলেন না, জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিলেন তারপরও তো একটা লজ্জা-শরমের ব্যাপার আছে।

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দুই/তিনদিন আগে পরিবহন ধর্মঘট ডাকার বিষয়টি তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, বিএনপির বেলায় সব বন্ধ। কোনো পরিবহন থাকতে পারবে না, বাস থাকতে পারবে না, স্টিমার চলতে পারবে না, লঞ্চ চলতে পারবে না, স্পিড বোট চলতে পারবে না। শুধু তাই নয়, রিকশা চলতে পারবে না, নসিমন চলতে পারবে না, টেম্পু চলতে পারবে না। কিছুই থাকতে পারবে না। এতে আমাদের একটা লাভ হয়েছে। আন্দোলনে একটা জিনিস আমরা শিখেছি যে, পরিবহন ছাড়াও আন্দোলন করা যায়। আন্দোলন এমন মাত্রা পেয়েছে যে, মানুষ দেশপ্রেমে উদ্ধুব্ধ হয়ে কোনো পরিবহন ছাড়া সমাবেশগুলোতে উপস্থিত হয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতি তাদের যে অবিরাম ভালোবাসা প্রমাণ করেছে। এটা আন্দোলন নয়, এটা বিপ্লবে পরিণত হয়েছে।

বিএনপির সমাবেশে মানুষ কেন আসছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তার মালিকানা হারিয়ে, আইনের শাসন হারিয়ে, জীবনের নিরাপত্তা হারিয়ে, বাকস্বাধীনতা হারিয়ে এমন পর্যায়ে এসেছে তাদের দুই বেলা খাবারও জুটছে না। ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। বিদ্যুতের অভাবে মানুষ অন্ধকারে আছে, মিল-ফ্যাক্টরি চলছে না, মানুষের কর্মসংস্থান নেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, ভয়ভীতির পরিবেশে তারা আছে।

আমীর খসরু বলেন, এখন মুক্তির ডাক এসেছে। মুক্তির ডাক এসেছে কীভাবে? বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এ নির্বাচনের খেলা, এ নির্বাচনের খেলা প্রত্যেকবার নির্বাচন আসে এ খেলা শুরু হয়। এবার কিন্তু আমাদের নেতা তারেক রহমান একটা বিষয় পরিষ্কার করেছেন, বিএনপি এ ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হলে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। বিএনপি এখন এটাও পরিষ্কার করেছে। বিএনপি শুধু নির্বাচনেই যাবে না, এ সরকারকে অপসারণ করবে। এজন্য জনগণ রাস্তায় ফয়সালা করবে।

তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি, পিরোজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর হোসেন, ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।