খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ যাবত্কালে এটিই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অঙ্ক। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রবিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারির সময় ব্যাংকঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ছাড় ও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা। বছরের শুরুতে তা তুলে নেওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এখন উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। কারণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়। বাংলাদেশে এটি এখন ৯ শতাংশের বেশি।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাত্ চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বরের সঙ্গে তুলনা করলে খেলাপি ঋণ ৩৩ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বেড়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এ অঙ্ক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এ পরিস্থিতিতে গত জুলাইয়ে নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্বে আসার পর খেলাপিদের বড় ধরনের ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণসংক্রান্ত নীতিমালা হালনাগাদ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন নীতিমালায় আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। আগে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডাউনপেমেন্টের অর্থ জমা দিতে হতো। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়। আগে এসব ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো। এছাড়া নীতিমালায় খেলাপি হলেও নতুন করে ঋণ পাওয়ার কথাও বলা হয়। এসব কারণে ঋণ শোধ না করে খেলাপিরা বিশেষ ছাড়ের অপেক্ষায় আছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।