যেমন করছে সেবা ও আবাসন খাতের কোম্পানিগুলো
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সম্প্রতি দেশের অর্থনীতি পার করছে কঠিন এক ক্রান্তিকাল।এসময় ডলার সংকট মুল্যস্ফীতি,রিজার্ভ কমে যাওয়া এরুপ বেশ কিছু আর্থিক সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও এর উত্তাপ পড়েছে বেশ ভালো ভাবেই। অনেক প্রতিষ্ঠান মৃতপ্রায়। কোভিডের সমস্যা পার করে দেশের কোম্পানিগুলো যখন একটু কোমর সোজা করে দাড়াচ্ছিলো তখনই যুদ্ধের থাবা। তবে এসব হাজারো প্রতিকূলতার মাঝেও সেবা ও আবাসন খাতে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চার কোম্পানি বেশ ভালো করছে।
সেবা ও আবাসন খাতে তালিকাভুক্ত আছে চার কোম্পানি। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো কোম্পানি ইস্টার্ণ হাউজিং লিমিটেড। ১৯৯৪ সালে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ প্রতি বছরই নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ২০১৬ সালে সর্বশেষ ৫% বোনাস শেয়ার (স্টক ডিভিড্যান্ট) ও ১৫% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিলো এরপর থেকে প্রতিবছরই কোম্পানিটি নগদ লভ্যাংশ ঘোষনা করেছে । ২০১৭ সালে ২২ শতাংশ ও ২০১৮ সালে ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষনা করে এই কোম্পানি । ২০১৯ সালে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষনা করে কোম্পানিটি । ২০২০ সালে কোভিড মহামারীর সময় আবাসন খাতের ব্যবসায় নেমে আসে মহামন্দা । তবুও এই কোম্পানিটি ২০২০ সালেও ঘোষনা করে ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিড্যান্ট বা নগদ লভ্যাংশ । সর্বশেষ ২০২১ সালেও কোম্পানিটি ঘোষনা করেছে ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ।
ঢাকা স্টক একচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে এই কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২২ পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০ শতাংশ ্নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ৮৮ পয়সা আলোচিত বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ ছিলো ৩ টাকা ২৮ পয়সা। গত ৩০ জুন, ২০২২ তারিখে সমন্বিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রায় ৯৩ কোটি টাকা পরিশোধিত মূল্ধনের এই কোম্পানিটিতে ৫০ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোল্ডার রয়েছে ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দশমিক ২৬ শতাংশ রয়েছে বিদেশী শেয়ারহোল্ডার। সাধারন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ২২ দশমিক ৪১ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১০৯ টাকা ৬০ পয়সা দরে।
সেবা ও আবাসন খাতের আরেক কোম্পানি সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। গত সেপ্টেবর মাসে কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ৮ বছর হয়েছে। এই আট বছরের মাঝে সর্বশেষ ৬ বছরই কোম্পানিটি প্রায় প্রতি বছরই ৫-১০ শতাংশ নগদ লভ্যাশ ঘোষনা করেছে। তালিকাভুক্তির পরে ২০১৪ সালে ২৭ শতাংশ ও ২০১৫ সালে ২৯ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করে। ২০২১ অর্থবছরে ৬ শতাংশ স্টক এবং ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাশ ঘোষনা করেছে। সর্বশেষ, শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর পুরোটাই নগদ লভ্যাংশ। ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ১ টাকা ৩২ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ৬৫ পয়সা। এছাড়া, ২০২২ সালের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৯১ পয়সা। এই লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য আগামী ২৯ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করার কথা রয়েছে কোম্পানিটির।
যদিও এই বছর কোম্পানিটি সর্বপ্রথম দেশের এমন কোম্পানি যারা বিদেশ থেকে জাহাজ পরিচালনা করতে যাচ্ছে। কোম্পানিটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ফুজাইরা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য বন্দরে আমদানি পণ্য পরিবহনের জন্য আটটি জাহাজ পরিচালনা করবে। প্রতিটি জাহাজ থেকে সাইফ পাওয়ারটেকের বছরে ১৫৪ কোটি টাকা আয় এবং ১৫ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা মুনাফা হবে বলে আশা করছে কোম্পানিটি। এই কোম্পানিটিতে ৪০ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোল্ডার রয়েছে ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ। সাধারন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার আজ সর্বশেষ ২৯ টাকা ৭০ পয়সা করে লেনদেন হয়েছে ।
সেবা ও খাতের আরেকটি কোম্পানি হচ্ছে শমরিতা হাসপাতাল। ১৯৯৭ সালে তালিকাভুক্ত এ ক্যাটাগোরির এই কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে। ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের এই লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। কোম্পানি ২০২১ সালেও দিয়েছিলো ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে দেখা গেছে, কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ২৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল দশমিক ১৭ টাকা। চলতি বছরের ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ৪৬ টাকায়। এই কোম্পানিটিতে ৪২ দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোল্ডার রয়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। দশমিক ০১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ । সাধারন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ৪৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হয়েছে সর্বশেষ ৭৩ টাকা ১০ পয়সায়।
সেবা ও আবাসন খাতের আরেক কোম্পানি সামিট এলায়েন্স পোর্ট লিমিটেড। ২০০৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া এই কোম্পানিটি ২০২১ সালে ১০% নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিলো। এর আগে ২০২১ সালে দিয়েছিলো ৮ শতাংশ নগদ ও ২ শতাংশ স্টক ডিভিড্যান্ড। ২০২০ সালে দিয়েছিলো ৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ। কোম্পানিটি ২৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা পেইড আপ ক্যাপিটাল নিয়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন করে। এই কোম্পানিটিতে ৫৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের। প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ারহোল্ডার রয়েছে ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ । সাধারন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার রয়েছে ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ আজ লেনদেন হয় ৩৬ টাকায় ।
(১৪ নভেম্বর,২০২২//মাহা)