দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হার তর্কাতীতভাবে লিওনেল মেসির জীবনের সবচেয়ে কষ্টের স্মৃতি। এমন দুঃস্মৃতির তালিকা করলে ২০১৮ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের একটি ম্যাচও তাতে থাকবে। যে ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হওয়ায় শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের সামনে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। এরপর এমবাপ্পের গতির ঝড়ে মেসিদের শিরোপা-স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। গ্রুপপর্বে ক্রোয়েশিয়ার কাছে না হারলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারত। নভগোরোদের সেই দুঃসহ স্মৃতিই এবার মেসিদের উজ্জীবনী শক্তি জোগানোর জ্বালানি হতে পারে। সাড়ে চার বছর পর সেই বিশ্বকাপেই আবারও দেখা হচ্ছে দুদলের। এবার আরও বড় মঞ্চে। দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে আজ রাত ১টায় কাতার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে লুকা মদরিচের ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে মেসির আর্জেন্টিনা।

প্রতিশোধের আগুনে ক্রোটদের পোড়াতে পারলে ফাইনালে ফ্রান্সের সঙ্গেও বকেয়া হিসাব চুকানোর সুযোগ মিলে যেতে পারে! মেসি অবশ্য বিষয়টিকে এভাবে দেখছেন না। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক জানেন, বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতা ঘোচানোর এটাই শেষ সুযোগ। সেই অমরত্বের সুধা পান করতে চাই আর মাত্র দুটি জয়। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে পুরো আর্জেন্টিনা লড়ছে মেসির জন্য। ৩৫ বছর বয়সি মেসিও প্রতি ম্যাচেই জাদুকরী কিছু মুহূর্তে গড়ে দিচ্ছেন ব্যবধান। গোল করছেন, করাচ্ছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারানোর পথে ঠোকাঠুকিতেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেসি!

ক্রোয়েশিয়া দলেও এমন একজন যোগ্য নেতা ও কিংবদন্তি চরিত্র আছেন। তার নাম লুকা মদরিচ। মেসির মতো ৩৭ বছর বয়সি মদরিচেরও এটা শেষ বিশ্বকাপ। গত আসরের ফাইনালে হেরে যাওয়া ক্রোয়েশিয়াকে আরেকটি ফাইনালের দুয়ারে আনতে মদরিচ রেখেছেন নীরব ভূমিকা। তবে দলে তার প্রভাব মেসির মতোই। নকআউট পর্বে টানা দুটি ম্যাচ টাইব্রেকারে জিতে, বিশেষ করে কোয়ার্টার ফাইনালে নেইমারের ব্রাজিলকে হারিয়ে মদরিচদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে।

নেইমারের মতো মেসিকেও কান্নায় ভাসিয়ে বাড়ি পাঠাতে চান ক্রোটরা। তবে ফরোয়ার্ড ব্রুনো পেতকোভিচ এ ধরনের হুংকার দিলেও ক্রোয়েশিয়া কোচ জ্লাতকো দালিচ ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে নিয়ে সতর্ক, ‘আমাদের আক্রমণাত্মক ঘরানার আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হওয়ার কথা মাথায় রাখতে হবে। এটা নিশ্চিত যে, ওরা রাশিয়ার হিসাব এখানে চুকাতে চাইবে। এটাই হয়তো মেসির শেষ বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতার শেষ সুযোগও। গত ১০ বছরের সেরা খেলোয়াড় সে। তাকে সামলানোর জন্য ভালোভাবেই প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের।’

আর্জেন্টিনাকেও একইভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে মদরিচকে সামলানোর জন্য। ২০০৬ সালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল মাঝমাঠের এই জাদুকরের। মেসি গোল পেলেও সেদিন জিতেছিল ক্রোয়েশিয়া। শুধু মদরিচ নন, প্রতিপক্ষের পুরো সৃষ্টিশীল মাঝমাঠ নিয়েই সতর্ক মেসি, বিশ্বমানের সব খেলোয়াড় নিয়ে তাদের পুরো মাঝমাঠই দারুণ সৃষ্টিশীল। একই কোচের অধীনে দীর্ঘদিন খেলায় তাদের বোঝাপড়াও খুব ভালো। ম্যাচটা কঠিন হবে।