দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনো কারও মানবাধিকার লংঘন করে না, বরং সুরক্ষা দেয়।

আওয়ামী লীগ মানুষের সমস্যার সমাধান করে, কল্যাণ করে। মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রশ্নে বিএনপির নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে, তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না? আমি নিজেও বলতে পারি-আমার মানবাধিকার কোথায় ছিল? কেন আমি বাবা-মায়ের লাশ দেখতে পাইনি? কেন খবর পাইনি। কেন আমাকে ৬ বছর দেশে আসতে দেয়নি। কেন রেহানার পাসপোর্ট জিয়াউর রহমান রিনিউ করতে দিল না? সে জবাব কি তারা দেবে? কোন সন্ত্রাসী, কোন জঙ্গি, কোন ড্রাগ ডিলার মারা গেছে, তাদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত। এরা যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তার কোনো কথা নেই।

বুধবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমেরিকা ও কানাডা খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশ দুটোর কাছে বারবার দাবি করেছি যে, জাতির পিতার সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের ফেরত দিন। কিন্তু তারা ফেরত দেয় না। তারা খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর মানবাধিকার রক্ষা করছে তারা। তাহলে আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি, আমাদের অপরাধটা কী? আমি জাতির কাছে জিজ্ঞাসা করিÑবিএনপি বা জামায়াতের জন্য যারা হাপিত্যেশ করে, কান্নাকাটি করে, তারা জবাব দিক।

সভায় গুম-খুন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির অনেকে গুম নিয়ে কথা বলে। আরে এ দেশে গুম-খুনের কালচার (সংস্কৃতি) তো শুরু করেছে জিয়াউর রহমান। আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে গুম করেছে। নির্বিচারে ফাঁসি দিয়ে মানুষ হত্যার সংস্কৃতিও এই জিয়াউর রহমানের। একদিনে দশজনকে ফাঁসি দিয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের যারাই প্রতিবাদ করেছে তাদেরই হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান। শত শত সামরিক অফিসার, সৈনিককে ফাঁসি বা ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে হত্যা করেছে, অনেক পরিবারই তাদের লাশ খুঁজে পায়নি। এখনো হাজার হাজার মা-বোন ও ভাইয়ের কান্না শোনা যায়।

সমালোচকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘোষণা করলাম। তখন সংসদে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া ও সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ভালো নয়। তাহলে বিদেশ থেকে খাদ্য সাহায্য পাওয়া যাবে না। মানে বিদেশিদের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে আমাদের চলতে হবে! কিন্তু আমি বলেছিÑআমরা কারোর কাছে হাত পেতে চলব না, নিজের পায়ে দাঁড়াব। তিনি আরও বলেন, শুধু বেঁচে থাকাই তো সুরক্ষা নয়। দেশের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলেছি। গরিব মানুষদের বিনা পয়সায় খাবার দিচ্ছি। করোনায় বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। ওরা (বিএনপি) ক্ষমতায় থাকলে তা দিত না, বরং তারা সেখানেও অর্থ চুষে খেত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়ন বিএনপির চোখে পড়ে না। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, যার সুবিধা সবাই ভোগ করছেন। বাংলাদেশ কেন এত দ্রুত আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে? এটাই তাদের বড় কষ্ট। কারণ তারা দুর্নীতি করে লুটে খেতে পারছে না। তিনি বলেন, এই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। এফবিআই তদন্ত করে বের করেছে তারেক রহমান ও কোকোর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের ঘটনা। অর্থ পাচার, অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এসব মামলা তো আর মিথ্যা নয়, এফবিআই তদন্ত করেছে, তারা এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে ভেগে গেছে খালেদা জিয়ার ছেলে। আর আমাকে দেশে ফিরতে বাধা দিতে হত্যা মামলা করেছিল, আমি জোর করে দেশে ফিরেছি মামলা মোকাবিলা করার জন্য। কারণ আমার আÍবিশ্বাস ছিল কোনো অন্যায় করিনি। এতিমের টাকা মেরে খাওয়ায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। এতিমের টাকা মেরে খেলে তার শাস্তির কথা পবিত্র ইসলাম ধর্মেও বলা আছে। আর এসব মামলা তো আমরা দেইনি। খালেদা জিয়ারই প্রিয়ভাজন ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনরাই এ মামলা দিয়েছে। এখানে আমরা কী করব? অন্যায় করেছে, সাজা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া ১২টা মামলা দিয়েছিল। একটি মামলাও এক্সিকিউটিভ অর্ডার দিয়ে প্রত্যাহার করা হয়নি। প্রত্যেক মামলার তদন্ত হয়েছে, কিছু খুঁজে পায়নি।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন প্রত্যাহারের ঘটনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ দিল, আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। কানাডার আদালত রায় দিয়ে বলেছে, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া। আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করেছি। এখন আমার প্রশ্নÑখালেদা জিয়া বলেছিলেন জোড়াতালির এই সেতুতে কেউ উঠবেন না! তবে কী বিএনপি নেতারা সাঁতরিয়ে বা নৌকা করে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন? তাদের পদ্মা সেতুতে উঠতে লজ্জা লাগেনি। খালেদা জিয়া তো নিজেই নিষেধ করেছিল, তবে তারা উঠল কেন? গঙ্গা চুক্তির সময়ও বলেছিল পানি আসেনি, এই পানি হালাল না। তাদের এত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আর কত লড়বেন? এরা কোনোদিনই চায় না বাংলাদেশ ভালো থাকুক, এগিয়ে যাক।

বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের সখ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, সন্ত্রাসী, খুনি ও জঙ্গিদের সঙ্গে। যারা সমাজের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করেছে তাদের আমরা বিচার করেছি। আর জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে পুনর্বাসিত করেছে। খুনিরাই তাদের (বিএনপি) কাছে হিরো। তিনি আরও বলেন, আজকে বুদ্ধিজীবী দিবস আমরা পালন করি। বিএনপির কী কোনো কর্মসূচি আছে? সেটাতে কী বোঝা যায়? জিয়া-এরশাদ-খালেদা স্বাধীনতাবিরোধীদের বিভিন্ন পদ দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।