দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: স্বাধীনতা যুদ্ধের অপরাধীদের ফাঁসি থেকে শুরু করে জাতীর পিতা হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকরে সুপ্রিম কোর্টের সাহসী পদক্ষেপগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টে আয়োজিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে তখন দেশের জনগণের বিপুল সমর্থন পেয়ে আমি সিদ্ধান্ত নেই দেশে ফিরে আসবো। আমি এমন এক দেশে ফিরে আসি যেখানে আমার বাবার হত্যাকারীদের রাজনীতিতে আসার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো।

যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব বড় বড় পদে সেইসকল স্বাধীনতা বিরোধীদের দেয়া হয়েছিলো।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, যখন জাতীর পিতাকে হত্যা করা হলো তখন আমি আর আমার ছোটবোন রেহানা বিদেশে ছিলাম। এ কারণে আমরা বেঁচে যাই। কিন্তু এরপরে আমাদের দেশে আসতে দেয়নি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মোস্তাক ও পরে জিয়াউর রহমান। আমরা তখন বিদেশে রিফিউজির মতো ছিলাম। রেহানার পাসপোর্ট রিনিউ করে দেয়নি তারা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই লক্ষ ছিলো যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। সেইসাথে মানুষের জীবনকে উন্নত করা যা আমার সারাজীবনের স্বপ্ন। আমি বহুবার বিচার চেয়েছি কিন্তু পাইনি। আমার মামলা করার অধিকারও ছিলো না। কারণ তখন ইনডেমনিটি আইন ছিলো। তার ২১ বছর পরে আমরা সরকার গঠন করি।

এসময় প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার বিপক্ষে অর্ডিন্যান্সটা যাতে বাতিল না হয় সেটা নিয়ে বিরোধী পক্ষ সবসময়ে সক্রিয় ছিলো। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে সেটা আসার পরে বাতিল হয় এবং আমরা পার্লামেন্টেও সেটা বাতিল করি। এরপরেই আমরা স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার কাজ শুরু করতে পারি। সে সময়ে যারা সাহস করে আদালতের রায় দিয়েছিলেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। এর জন্য সাবেক বিচারপতি তোফাজ্জল সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই।

অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা জনগণের ভোট চুরি করে পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশ ভুয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে আসনে বসে। অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করতো। সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্যেও সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ জানাই। এর ফলে সুপ্রিম কোর্ট সবসময়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের শক্তিই সবথেকে বড় শক্তি আর একটা বিশ্বাস আর উপরে রাব্বুল আলামিনতো আছেনই কাজেই সেই মানুষের শক্তি নিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আর ’৯৬ থেকে ২০০১ এদেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ ছিল। তারপর আবার একটা চক্রান্ত হলো (২০০১ সালের নির্বাচনে) আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি ফলে বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, লুটপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা ছিল না। অগ্নিসন্ত্রাস, নির্যাতন কি না হয়েছে এদেশে। কিন্তু প্রতিটি সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানুষের পাশে থেকেছে। আর আমরা সরকারে যখন থেকেছি এই প্রত্যেকটা জিনিষ আমরা মোকাবিলা করেছি।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামাতসহ আরও কিছু পার্টি মিলে দাঁড়ালো কিন্তু আরেকটি জিনিষ খুব অবাক লাগে কোথায় লেফটিস্ট আর কোথায় রাইটিস্ট। যারা লেফটিস্ট তারা মনে হল ৯০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়েছে। অর্থাৎ সেই জামাত বিএনপি তাদের সাথে আমাদের বাম, অতি বাম,স্বল্প বাম, তীব্র বাম, কঠিন বাম সব যেন এক হয়ে এক প্লাটফর্মে।

‘সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এদেশ। সেকথাই মনে হয়, কোথায় তাদের নীতি আর আদর্শ, কোথায় কি’, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, কি কারণে যারা হত্যাকারি, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামী, গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের সেতা-কর্মী হত্যার বিচারের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামী, মানি লন্ডারিংয়ে সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করে যে দলের প্রধান সাজাপ্রাপ্ত আসামী তাদের নেতৃত্বে এত বড় বড় তাত্ত্বিক এত বড় বড় কথা বলে, এত কিছু করে তারা এক হয়ে যায় কিভাবে। কিভাবে এক হয়ে যায় সেটাই আমার প্রশ্ন।