আওয়ামীলীগের জাতীয় সম্মেলন,কমিটি হবে নির্বাচনমুখী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আজ। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হবে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। একই সঙ্গে দলটির আগামী নেতৃত্ব কেমন হবে? দলের সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকীয় পদ ও সদস্য পদে কারা আসছেন- এসব নিয়ে ব্যাপক কৌতূূহলী নেতাকর্মীরা। যেহেতু ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই নতুন কমিটি হবে এমন আলোচনা রয়েছে দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের আগামী কমিটি হবে নির্বাচনমুখী।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের ২২তম সম্মেলনে কমিটিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না। কারণ সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে নির্বাচনের পর আগামও সম্মেলন করতে পারি, সে রকমও চিন্তাভাবনা আছে। তখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। তবে এখন বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি সাজানো হবে। এ কমিটি আগামী দিনে দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের দলীয় ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নে কাজ করবে। পাশাপাশি দেশবাসীর কাছে সরকারের উন্নয়ন ও অর্জন তুলে ধরতেও কাজ করবে। সৎ-সাহসী, আদর্শবান ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নেতৃত্ব পাবে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকবেন- তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সবারই একই চাওয়া। তবে দৃষ্টি সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে। এবারে কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক? অনেকেই বলছেন ওবায়দুল কাদেরই হ্যাটট্রিক করবেন এ পদে। তবে আরও অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনকি সম্পাদক, সম্পাদকীয় ও সদস্য কারা হচ্ছেন তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। কারণ এ নেতৃত্বকে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তাই দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং জনপ্রিয়রাই এ পদে আসবেন- এমনটা প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের।
এদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় রেখে সাদামাটা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। উন্নয়ন অভিযাত্রায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সম্মেলনে দলের সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। ফলে তিনি এখনও অপরিহার্য। এটি মাথায় রেখেই জাতীয় সম্মেলনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে আওয়ামী লীগ।
বিগত সময়ের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে ঘিরে নেতাকর্মীর মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। এ নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, এ বিষয়ে যথাসময়ে যথার্থ সিদ্ধান্ত নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কয়েক যুগ ধরে নেতৃত্ব দিয়ে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। আগামীতেও তিনি এভাবেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তাই যথাসময়েই তিনি পরিবারের সদস্যদের দলে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ঘোষণাপত্র অনুমোদন করা। এবারের ঘোষণাপত্রের সেøাগান ঠিক করা হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। এরমধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে কী কী থাকবে, সেটার আলোচনা হয়েছে। ফরিদপুর ও কুমিল্লায় দুটি নতুন বিভাগ হবে, এ বিবেচনায় আওয়ামী লীগে আরও দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক ও একটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাড়ানো যায় কি না, সেই আলোচনাও হয়েছে। তবে কমিটির সদস্যসংখ্যা না বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনের পর ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাংবাদিকদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এ সম্মেলন হবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি। আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জাতির কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিক কাজে গতিশীল ও গ্রহণযোগ্য নেতাদেরই সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনই মানেই চমক। আর চমক দেখাতে পছন্দ করেন নেত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে চমক আসবে। ফলে এ সম্মেলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নেতা নির্বাচনই তো আওয়ামী লীগের মতো একটা দলের মূল উদ্দেশ্য নয়। সম্মেলেনে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী করণীয় নিয়ে দলকে গাইডলাইন দেবেন। সেই গাইডলাইন অনুসারে দল আগামী তিন বছর চলবে। তিনি আগামী নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে কথা বলবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, এবারের সম্মেলন খুবই সাদামাটা। বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও সংকট মোকাবিলা করছে। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচন, তাই সম্মেলনের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। কারণ এই সম্মেলনকে ঘিরেই আগামী নির্বাচনের জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড নেত্রীর নখদর্পণে। সুতরাং, তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে, কোন জায়গায় কাজে লাগাবেন। কে কোন জায়গার জন্য বেশি যোগ্য বিবেচিত হবেন, সেটি নেত্রীই ঠিক করবেন।