দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আর দুদিন পর আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশে চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। সে লক্ষ্যে মেট্রোস্টেশন ও সড়কের মিডিয়ান দৃষ্টিনন্দন করে সজ্জিত করা হয়েছে।

স্বল্প পরিমাণ কাজ বাকি রয়েছে, সেগুলোও এখন তড়িঘড়ি করে করা হচ্ছে। ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এই বৈদ্যুতিক ট্রেনের উদ্বোধন করবেন। পরের দিন থেকে সকাল ও বিকালে ২ ঘণ্টা করে মোট ৪ ঘণ্টা চলবে মেট্রোরেল।

উদ্বোধন উপলক্ষে মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেল বরাবর নিচের সড়ক দিয়ে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প ও দিয়াবাড়ীতে চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।

উদ্বোধনের দিন এই সড়ক দিয়ে উত্তরা উত্তর বা মেট্রোরেলের ১ নম্বর স্টেশনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রথমে তিনি সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন।

সুধী সমাবেশ শেষে মেট্রোরেলের ১ নম্বর স্টেশনসংলগ্ন নামফলকের উদ্বোধন করবেন। এরপর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁওয়ে মেট্রোস্টেশন হয়ে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী কর্মসূচি শেষ করবেন।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সব স্টেশনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন বারবার মেট্রোরেল চালিয়ে সবকিছু চেক করা হচ্ছে।

আগারগাঁও মেট্রোস্টেশনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেন, স্টেশনটি তিনতলাবিশিষ্ট। দ্বিতীয়তলায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় এমন দোকান বসানো হবে। ওই বাণিজ্যিক জায়গায় প্রস্তুতকৃত খাবার বিক্রি করা হবে। তবে আগুন জ্বালিয়ে সেখানে কোনো খাবার তৈরি করার সুযোগ থাকবে না। মেট্রোস্টেশন কম্পাউন্ডের ভেতর ধূমপানও নিষিদ্ধ। কেননা মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রিত এলাকার সামান্য পরিমাণ আগুন জ্বললেও অগ্নিনির্বাপণ পদ্ধতিতে বড় আওয়াজ করবে। বিদ্যুৎচালিত ট্রেনে আগুন জ্বালানোর সুযোগ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কোথাও এই সুযোগ রাখা হয় না।

সব নাগরিকদের কথা বিবেচনা করেই মেট্রোরেল তৈরি করা হয়েছে। হেঁটে চলার সিঁড়ি, চলন্ত সিঁড়ি ও লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে। বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনা করে এসব সুবিধা ভোগ করবেন যাত্রীরা। প্রতিবন্ধীরা লিফটে চড়বেন, বয়স্করা চলন্ত সিঁড়িতে চড়বেন এবং তরুণ ও যুবকরা সাধারণ সিঁড়ি বেয়ে মেট্রোস্টেশনে ওঠানামা করবেন।

বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল বা এমআরটি-৬ এর উদ্বোধনের পর প্রাথমিকভাবে সকাল ও বিকালে দুই ঘণ্টা করে চার ঘণ্টা চলবে। উত্তরা উত্তর স্টেশন বা প্রথম থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে এই বিদ্যুৎচালিত এই উড়াল ট্রেন। এই পথের দূরত্ব ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। উদ্বোধনের দিনই এ দুটি স্টেশন খুলে দেওয়া হবে। সে মোতাবেক সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে।

মেট্রোরেলের এই অংশের বাকি সাতটি স্টেশনও পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে খোলা হবে। যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে মেট্রোরেলের শিডিউল নির্ধারণ করা হবে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে-উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ী), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। উদ্বোধনী দিন শুরুর ও শেষের মেট্রোস্টেশন খুলে দেওয়া হবে। পরে ধাপে ধাপে অন্য স্টেশনগুলো খোলা হবে।

উল্লেখ্য, সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করেছে ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা, কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে ভাড়া হতে পারে ১২০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেলে যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ভাড়া হবে ৬০ টাকা। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৭ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা-জাইকা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। দিয়াবাড়ী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই মেট্রোরেল নির্মাণে খরচ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। আর মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য প্রথম বছরে সরকার বরাদ্দ করেছে ১ হাজার কোটি টাকা।