নতুন বছর:পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা মিটছে কতটুকু?
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সদ্যবিদায়ী ২০২২ সালের অধিকাংশ সময় দেশের পুঁজিবাজার ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির মতো বিভিন্ন কারণে পুঁজিবারের নেতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। এই ভঙ্গুর অবস্থা থেকে উত্তরণে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও সুফল খুব একটা অসেনি। তবে নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার এই প্রত্যাশাই ছিলো সকলের। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
বছরের প্রথম সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে (১ থেকে ৫ জানুয়ারি) সব সূচকগুলো কমেছে। যদিও সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। আজ বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহের সপ্তাহের প্রথমদিনও ডিএসই প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) ১ পয়েন্ট কমে ৬১৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
তবে, গেলো সপ্তাহে অর্থাৎ বছরের প্রথম সপ্তাহে ডিএসইতে সপ্তাহটিতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত ছিলো । পাশাপাশি সপ্তাহটিতে বিনিয়োগকারীরা তিনশত কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে।
গেলো সপ্তাহে অর্থ্যাৎ বছরের প্রথম সপ্তাহে ডিএসইতে ১ হাজার ১৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫১ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭২ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ২০৮ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেনে ৬০ কোটি ৬৩ লাখ ১৮ হাজার ২৪৩ টাকা বেড়েছে।
কিন্তু গেলো সপ্তাহে কমেছে সূচক কমেছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট কমেছিলো।সেই পতন আজও অব্যাহত ছিলো।
অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৯০ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে এক হাজার ৩৫৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৯২ পয়েন্ট দিয়ে সপ্তাহ শুরু করে । এদিকে, সপ্তাহের প্রথম দিন পতনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। উভয় সূচকই ১ পয়েন্ট করে কমে যথাক্রমে ১৩৫২ ও ২১৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আজ ডিএসইতে ৩৩০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪০টির, কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬৮টির।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বার বার বলা হচ্ছে, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। অপেক্ষমাণ উদ্যোগগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে নতুন বছরে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যনতুন লেনদেন বোর্ডবছরের প্রথম সপ্তাহেই চালু করা হয়। গত বুধবার ডিএসই কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবির) লেনদেন উদ্বোধন করেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। এটিবি প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের করপোরেট গ্যারান্টিযুক্ত বন্ড এবং লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের শেয়ার নিয়ে এর যাত্রা শুরু করে।
এরুপ নানা আশার কথা শোনাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টো ঘটনা। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মনে করেন, এ মার্কেটে আসতে হবে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের কথা ভেবে। বুঝেশুনে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করলে অবশ্যই রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। স্বল্প সময়ে লাভের আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে মার্কেট ভালো হবেনা বলে মনে করেন তিনি। তিনি যোগ করেন মার্কেট শুধু একা বিএসইসির পক্ষে ভালো করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক,এনবিআরসহ সকলকে একসাথে কাজ করার উপর জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক নতুন বছর একটা ভালো বাজার প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন, গত বছর যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশ নয় শুধু। সারা বিশ্বই এক ক্রান্তিকাল পার করেছে । তিনি আরো বলেন , বাজার স্থির রাখতে গত বছর থেকেই কমিশন কাজ করেছে কিন্তু বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি । গেলো বছর বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিস্ব হয়েছে। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশপাশি কমিশন ও কাজ করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার ২০২৩ সালের শুরুতেই এই সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করেন । তিনি বলেন ২০২২ সালে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি একটা বাজে সময় পার করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই এর প্রধান কারন ছিলো বলে উল্লেখ করেন। ২০২৩ সালে কোন সংকট থাকবেনা বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ মনে করেন, নতুন বছর যেমন বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে হতে হবে সতর্ক। পুঁজিবাজারের চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে মনে করেন তিনি। স্বল্পমেয়াদী কোন পদক্ষেপে পুঁজিবাজার রক্ষা সম্ভব নয়। আবু আহমেদ আরও বলেন, "জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কমিশনকে মৌল ভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। নতুন বছরসহ আগামীতে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় ভালো মানের কোম্পানিগুলোকে বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত করতে হবে।"
বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাই প্রত্যাশা করেন পুঁজিবাজারের জন্য কঠিণ এক বছর শেষে এই ২০২৩ সালে সবার "প্রোপার পারটিশিপেশনে" বাজার আবার স্বাভাবিকরুপে ফিরে আসবে।
(দ্য/রিপোর্ট,মাহা/আট ডিসেম্বর/দুইহাজার তেইশ)