দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের করপোরেট গ্যারান্টিযুক্ত বন্ড এবং লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের শেয়ার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)। গত সপ্তাহেই এটিবির লেনদেন উদ্বোধন করেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

কিন্তু পুঁজিবাজারের বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে এটিবির ধারণাটি অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। সোস্যাল মিডিয়ায় বিনিয়োগকারীদের নানা গ্রুপে নানা প্রশ্ন দেখা গিয়েছে। আসলে এটিবি কি? কারাই বা লেনদেন করতে পারবেন এখানে এরুপ নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মনে। এটিবি হচ্ছে এমন এক প্লাটফর্ম যেখানে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা যেকোনো কোম্পানি সরাসরি তালিকাভুক্ত হয়ে শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটিকে অবশ্যই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তিত হতে হবে।

এটিবি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রত্যাশা অনেক। তবে এবার কোন স্বল্পমেয়াদী নয়। এটিবি নিয়ে আসবে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল, এমনটাই মনে করেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তিনি বলেন, এটিবির সুফল আজকেই পাওয়া যাবে না।কোনো কিছু তৈরি করলে তার ফলাফল আসতে টাইম দিতে হয়। এরসুফল পাওয়া যাবে অনেক পরে।

নতুন এই প্লাটফর্ম চালুর ফলে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির সিকিউরিটিজ, প্রাইভেট প্লেসমেন্ট বন্ড, সুকুক এবং বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন করা যাবে। এটিবি চালু হলে পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানির উদ্যোক্তারা খুব সহজে মালিকানা পরিবর্তন বা শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবেন। আগে এই কাজটি করতে অনেক ব্যয় হতো। বর্তমানে ট্রান্সফার ফি ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটসহ বড় ধরনের খরচের বোঝা বহন করতে হয়। এটিবির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সামান্য কমিশনেই শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে। বাড়তি কোনো ফি দিতে হবে না। তবে মূলধন বাড়ানোর উদ্দেশ্য এটিবিতে তালিকাভুক্ত হওয়া যাবে না। অর্থাৎ এ প্লাটফর্মের তালিকাভুক্ত হলে শেয়ার সংখ্যা বাড়বে না। শুধু একটি লেনদেন প্লাটফর্মের হিসেবে বিক্রেতার অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্রেতার শেয়ার প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করছে এটিবি। এই প্লাটফর্মের সিকিউরিটিজকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ হিসেবে অভিহিত করা হবে। মূল বোর্ডের মতো এখানে দ্বৈত তালিকাভুক্তির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এছাড়া কোম্পানিগুলো সরাসরি শেয়ার লেনদেনের সুযোগ পাওয়ায় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল জোগানদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের মূলধন দিতে উৎসাহিত হবে। কেননা এটিবিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলোর বিনিয়োগ করা শেয়ার হস্তান্তরের অবারিত সুযোগ তৈরি হবে।


প্রশ্ন রয়েছে এটিবিতে কারা লেনদেন করতে পারবে? দেশের ২ হাজার ১৭৩টি কোম্পানি এখন স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরে। এই কোম্পানিগুলো এটিবিতে এখন নিজেদের শেয়ার লেনদেনের সুযোগ নিতে পারবে। বিএসইসি সুত্রে জানা যায়, এটিবিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মতো কর সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। এনবিআরের সম্মতি পেলে সাড়ে ৭ শতাংশ কর ছাড় পাবে কোম্পানিগুলো। এটা করা হলে কোম্পানিগুলো আগ্রহী হবে এই প্লাটফর্মে লেনদেন করতে। এটিবিতে তালিকাভুক্তি অনেকটা সরাসরি বা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মতো। নতুন শেয়ার না ছেড়ে উদ্যোক্তার হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্তি নেয়া যাবে। শেয়ারের মূল্যও হবে বাজারভিত্তিক।এখানে লেনদেনের ক্ষেত্রে টি+২ নিষ্পত্তি হবে। বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনার ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধাও পাওয়া যাবে। এ প্লাটফর্মে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোকে বছরে একবার মূল্যসংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে হবে।

এদিকে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি থেকে এক নির্দেশনায় ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে থাকা ১৮টি কোম্পানিকে এটিবিতে স্থানান্তর করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী গত বছরের আগস্টে ডিএসই অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড রেগুলেশন ২০২২-এর অনুমোদনও দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এটিবিকে গতিশীল এবং পরিচ্ছন্ন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ওটিসি মার্কেটের কোম্পানিগুলোকে আপাতত এটিবিতে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না।