দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: টানাপোড়েনের মধ্যেও সম্পর্ক জোরদারে সচেষ্ট বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত এলিন লোবাচেরের সফরের পর আগামী শনিবার দুদিনের সফরে ঢাকা আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তার সফরে ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার বার্তা আসছে।

তবে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের অপ্রীতিকর ঘটনা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারসহ বিষয়গুলোও আলোচনার এজেন্ডায় থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভূরাজনৈতিক স্বার্থ এবং কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের আগ্রহ বাড়ছে। এ আগ্রহকে লুফে নিয়ে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারও দুদেশের মধ্যে দেয়াল হয়ে থাকা ইস্যুগুলোর সুরাহা করে নিতে চাইছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিও জোর দেওয়া হবে। ওয়াশিংটনও সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তাদের প্রস্তাবিত জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) এবং অ্যাকুইজিশন ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (এসিএসএ) নিয়ে আলোচনা এগিয়ে রাখার পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলেও ঢাকাকে পাশে চাইবে।

এ ছাড়াও বাংলাদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি ও ঢাকায় মার্কিন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও ওয়াশিংটন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ডোনাল্ড লুয়ের জন্য বিষয়গুলো ইতোমধ্যে আলোচনার টেবিলে তুলে দিয়ে গেছেন হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা লোবাচের।

এদিকে বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী গতকাল বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডোনাল্ড লু জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার, মানবাধিকারসহ নানা ধরনের অগ্রাধিকারের বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি ভারত ও বাংলাদেশ সফর করবেন। তিনি দিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ফোরামে অংশ নেবেন। সেখান থেকে তিনি আগামী শনিবার বাংলাদেশে আসবেন। তার সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার পাশাপাশি মানবাধিকার, শ্রম অধিকারের বিষয়টি আলোচনা হবে।

জানা গেছে, ঢাকা সফরকালে আগামী ১৫ জানুয়ারি ডোনাল্ড লু পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় করবেন। সুযোগ পেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করবেন তিনি। পাশাপাশি তিনি দূতাবাসের আয়োজনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ডোনাল্ড লু’সহ মার্কিন প্রতিনিধিদের সফরগুলোকে স্বাগত জানান। ডোনাল্ডের সফরকে একটি রুটিন সফর হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুব ভালো। এ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে আগ্রহী সরকার।

র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর সফরে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় বিনিয়োগকারী। দেশটির সঙ্গে আমাদের বহুবিধ সম্পর্ক রয়েছে। দুদেশের মধ্যে টেনশনের ইস্যুতেও আলোচনা হবে।

উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি অস্বস্তিকর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বিদায়ী বছরটি শুরু হয়েছিল। আর চলতি বছরের শুরুতেই এলিনের পর চীনা বংশোদ্ভূত জ্যেষ্ঠ মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসছেন। তা-ই নয়, চলতি মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন কর্মকর্তা ঢাকায় আসবেন বলে জানা গেছে। এই কর্মকর্তাদের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অস্বস্তি নিরসনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সেগুনবাগিচার কর্মকর্তারা। জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আসন্ন সফরটি হবে ডোনাল্ড লু’র দ্বিতীয় ঢাকা সফর। এর আগে গত বছর মার্চে রাজনীতি বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগে নিঃশব্দে অংশ নিয়ে ঢাকা ঘুরে গেছেন।