বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম রোধে আইনি সহায়তা চায় ইউজিসি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) ক্ষমতা দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি, প্রোভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগে ইউজিসির মতামত গ্রহণ এবং একটি নীতিমালা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা, উচ্চতর গবেষণা, উদ্ভাবন, নতুন জ্ঞান সৃজন ও উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে ইউজিসি ১৭ দফা সুপারিশ করেছে। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২১ পেশ করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ।
এ সময় সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক ও নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত:প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ইউজিসি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তবে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, নিয়োগে অনিয়ম, অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি, সনদ বাণিজ্য, আর্থিক অনিয়ম এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউজিসির সুপারিশ অনেকাংশে বাস্তবায়ন করা হয় না। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা কমিশনের থাকা জরুরি। তাছাড়া কমিশনকে তদন্তু প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ক্ষমতা দেওয়ার জন্য সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।
ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ:ভিসি, প্রোভিসি. ট্রেজারার নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ট্রেজারার নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতি নেই। এমনকি ইউজিসি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষ সাধনসহ উচ্চশিক্ষার সার্বিক তদারকির দায়িত্ব পালন করলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণিত তিনটি পদে (উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইউজিসির কোনো ধরনের মতামত নেওয়া হয় না। ইউজিসির মতামতের ভিত্তিতে দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদদের মধ্য থেকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগ দেওয়ার জন্য সরকার একটি বাস্তবায়নযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে।
নিয়োগ দুর্নীতি:শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে প্রায়শই স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ হয়। ফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং যোগ্যতাসম্পন্ন জনবল নিয়োগের উদ্দেশ্যে একটি ‘স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন’ গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য ইউজিসি প্রণীত পৃথক পৃথক নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নির্ধারণী নির্দেশিকার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্রুত নীতিমালা তৈরি করে তা কার্যকর করতে পারে।
র্যাংকিং:র্যাংকিং নিয়ে বলা হয়, মানসম্মত বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেশীয় বা জাতীয় র্যাংকিং করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার আদলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি র্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ:এ বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষক তৈরি করতে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, উন্নতমানের গবেষণা করার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও গবেষণার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম:রিপোর্টে বলা হয়, বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, সিন্ডিকেট, অর্থ কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা নিয়মিত আহ্বান করা হয় না। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নেই। অধিকন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পিইউএফআর অনুসরণ করে হিসাব বিবরণী তৈরি করে না এবং প্রতিবছর নিয়মানুযায়ী তাদের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে না, যা মোটেও কাম্য নয়। এ বিষয়ে সরকার ও কমিশন আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস:এ সম্পর্কে বলা হয়, অস্তিত্বহীন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তির খবর প্রায়শই গণমাধ্যমে আসে। সাময়িক অনুমতিপত্র বা সনদপত্র নেওয়া ছাড়া বাংলাদেশে কোনো বেসরকারি বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনা সম্পূর্ণ অবৈধ। গুণগত উচ্চশিক্ষার প্রসারে সীমিত পরিসরে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অবকাঠামোগত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন ও পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত তদারকির জন্য বিদ্যমান বিধিমালা ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০’ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪- এর সংশোধন করার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তা দ্রুত শেষ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এই সংশোধনী আনার পরই কেবলমাত্র শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।