মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে এসে পড়ছে ক্ষতির মুখে
মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট: "পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পূর্বে কোম্পানিগুলোর তথ্য নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত পারফেক্টলি কাজ করা" এমনটাই মনে করেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, অনেক কোম্পানিই শেয়ার মার্কেটে আসার আগে মুনাফা বেশি দেখায় যা কোম্পানিগুলোর আসল অবস্থা না এমন অভিযোগও শোনা যায় পুঁজিবাজারে আসার আগে কোম্পানিগুলোর ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সবসময় সঠিক তথ্য থাকে না। এমন দুই একটা কোম্পানি থাকলেই পুঁজিবাজার ক্ষতির মুখে পড়ে যায় বলে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে আসার পরে কোম্পানিগুলোর পারফর্মেন্স দেখলেই বোঝা যায় তাদের কোম্পানির আসল অবস্থা।
পুঁজিবাজারের এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনের পুঁজিবাজারে আসতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন।
২০২১ সালে বেশ ভালো পরিমাণ মুনাফা নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ৫টি কোম্পানি। কিন্তু ২০২২ সালে মুনাফা করেছে মাত্র একটি কোম্পানি। বাকি ৪টি কোম্পানিই আছে ক্ষতির মুখে ,কমেছে ৪টি কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয়ও।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে দেখা মীর আক্তার হোসেন, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, ইনডেক্স অ্যাগ্রো ও লুব-রেফ বাংলাদেশ গত ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসে। এর মধ্যে শুধুমাত্র লুব-রেফ বাংলাদেশ মুনাফা করেছে সর্বশেষ অর্থবছরে। কোম্পানিরটি মুনাফা করেছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে ২০১৯ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ২০ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা যা তিন বছরের মাথায় ২০২২ সালের ৩০ জুন কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৩১ কোটি ৯০ হাজার টাকা। টাকার হিসেবে তিন বছরের ব্যবধানে কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে ১০ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয়ও (ইপিএস) বেড়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় ছিল ২ টাকা ৮ পয়সা, আর ২০২২ সালের ৩০ জুন শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ১৩ পয়সা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানির ইপিএস বেড়েছে দশমিক ৫ পয়সা।
একইসময়ে পুঁজিবাজারে আসা ইন্ডেক্স অ্যাগ্রো সর্বশেষ বছর ২০২২ সালের ৩০ জুন কর-পরবর্তী মুনাফা ছিলো ২৪ কোটি ৫৯ হাজার টাকা। যা তালিকাভুক্তির আগে ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত আর্থিক বছরে কর-পরবতী মুনাফা ছিল ২৭ কোটি ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৬ টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৬ টাকা। গত তিন বছরে কোম্পানির ইপিএসও কমেছে কোম্পানিটির । ২০১৯ সালের ৩০ জুন কোম্পানির ইপিএস ছিল ৭ টাকা ৭ পয়সা যা ২০২২ সালের ৩০ জুন ইপিএস কমে ৫ টাকা ৯ পয়সায় অবস্থান করছে।
ডিএসই ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কোম্পানিটির তালিকাভুক্ত হওয়ার পর মুনাফা কমেছে ৪৫ কোটি ৮৬ লাখ ২ হাজার ৫১৩ টাকা। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বলছে ২০২২ সালের ৩০ জুন মুনাফা হয়েছে ২১ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা যা তালিকাভুক্তির আগে ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত আর্থিক বছরে মুনাফা ছিল ৬৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮২ হাজার ৫১৩ টাকা। শতাংশের হিসেবে কমেছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় কমেছে ৩ টাকা ১২ পয়সা। পুঁজিবাজারে আসার আগে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ৪ টাকা ৩৭ পয়সা। আর সর্বশেষ অর্থবছরে ২০২২ সালের ৩০ জুন কোম্পানির ইপিএস হয়েছে। ১ টাকা ২৫ পয়সায়।
এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের তিন বছরের ব্যবধানে মুনাফা কমেছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। টাকার হিসেবে ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার । ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে ২০২২ সালের ৩০ জুন তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানির মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ৪৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ইপিএসও কমেছে প্রায় ৮৮ শতাংশ। ২০১৯ সালের ৩০ জুন কোম্পানির ইপিএস ছিল ৩ টাকা ১৩ পয়সা যা ২০২২ সালের ৩০ জুন তা এসে দাঁড়িয়েছে শুধুমাত্র ৩৮ পয়সায়।
প্রকৌশল খাতের কোম্পানি মীর আক্তার হোসেন ২০২২ সালের ৩০ জুন কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকায়। দুই বছরের ব্যবধানে কোম্পানির মুনাফা কমেছে ২ কোটি ১২ লাখ ৬ হাজার ৯৯৭ টাকা বা ৬ শতাংশ। তালিকাভুক্তির আগে ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে মুনাফা করেছিল ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ৯৯৭ টাকা। পাশাপাশি ২০২০ সালের ৩০ জুন শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৩ টাকা ৭৫ পয়সা, যা দুই বছরে কমে দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৯৩ পয়সা। প্রাপ্ত হিসাব মোতাবেক দুই বছরের ব্যবধানে ইপিএস কমেছে ২২ শতাংশ।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিএসইসি যথাযথভাবেই পর্যালোচনা করে যাচাই বাছাই করে পুঁজিবাজারে কোম্পানি নিয়ে আসছে। ভালো কোম্পানি আনার ব্যাপারে বিএসইসি সর্বদাই সচেতন।