কিডনি রোগীদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলাফল খুবই গুরুতর
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কিডনি রোগীদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলাফল খুবই গুরুতর। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত ডায়ালাইসিস রোগীদের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে ৫০ শতাংশ।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি) রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০ গুণ বেশী। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের (সিএপিডি) রোগীদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও অনেক।
করোনাভাইরাসের দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব নিয়ে অনুষ্ঠিত সিম্পোজিয়াম থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। সোমবার দুপুরে (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিলন হলে কিডনি ডিজিজ রিসার্চ গ্রুপ ‘মাল্টিটিউড অব ইস্যুজ ইন কোভিড: রেনাল, কার্ডিয়াক অ্যান্ড মেটাবলিক ইনফ্লুয়েন্স’ ও ‘লং টার্ম হেলথ কনসিকোয়েন্সেস অ্যাজ এ পোস্ট কোভিড-১৯ সিকোয়াল ইন হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক এ সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে।
বিএসএমএমইউ’র অর্থায়নে ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ৮০৪ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর একটি প্রাথমিক গবেষণা পরিচালিত হয়।
সিম্পোজিয়াম থেকে বক্তারা বলেন, করোনা অতিমারি পুরো বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে। কিডনি রোগীদের করোনা হলে ফলাফল অত্যন্ত খারাপ। ডায়ালাইসিসের রোগীদের করোনা হলে তাদের শতকরা ৫০ জনের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
তারা বলেন, ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। সিএপিডি রোগীদের করোনা হওয়ার ঝুঁকি অনেক। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদেরও করোনায় মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ। করোনার টিকার কার্যকারিতা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের অনেক কম। করোনার টিকায় ডায়ালাইসিস রোগীদের কার্যকারিতা শতকরা ৮৭ ভাগ। এ টিকা নেফ্রাইটিস রোগের পুনরাগমন ঘটাতে পারে।
সিম্পোজিয়ামে থেকে বলা হয়, ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘ মেয়াদী অসংক্রামক রোগ, অন্যদিকে কোভিড নিউমোনিয়া, একটি সংক্রামক রোগ। কোভিড হলে এই দুই ধরণের রোগের কিছু জটিলতা দেখা যায় এবং একটি রোগের দ্বারা অন্যটি প্রভাবিত হয়। তাই কোভিড নিউমোনিয়া হলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অপর দিকে যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের কোভিড জটিলতাও বেশি হয়।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সব কোভিড আক্রান্ত রোগীর মাঝে শতকরা ১০ ভাগের ডায়াবেটিস আছে। এদের শতকরা ১৫ ভাগের চিকিৎসাধীন থাকার প্রয়োজন হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিআইসি’র মধ্যে যাদের ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, তারা কোভিডের টিকা গ্রহণ করবে। তবে টিকা নেওয়ার সময় অবশ্যই রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে। তবেই টিকা নেওয়ার পর একজন ব্যক্তি কোভিড থেকে সুরক্ষা পাবে।
কোভিড পরবর্তী কিছু জটিলতা নিয়েও কিছু রোগী আমাদের কাছে আসছেন। তাকে পোস্ট কোভিড অথবা লং কোভিড সিনড্রোম বলা হয়। দুর্বলতা, গায়ে ব্যথা, মাথা ধরা, ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে কোভিড টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এর জটিলতা প্রতিরোধ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
প্রধান গবেষক এবং বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনায় আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগছেন। চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। করোনায় বাংলাদেশে পেশাজীবীদের মাঝে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশি মারা গেছেন। আক্রান্তদের শতকরা ৪০ ভাগ চিকিৎসক ও শতকরা ৩৪ ভাগ নার্স লং কোভিডে ভুগছেন। করোনায় যাদের ডায়াবেটিস ছিল না, তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে। করোনায় অনেকের মায়োপ্যাথি হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, কোভিড শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বের অনেক দেশেই কোভিড রয়েছে। কোভিডের সংক্রমণের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।
সিম্পোজিয়ামে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সালেহ আহমেদ, বারডেমের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কানসালট্যান্ট ডা. মীর ইসারাকুজ্জামান একটি করে গবেষণা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে গবেষণা ফল প্রকাশ করেন অধ্যাপক ডা. মাসুদ ইকবাল।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দিপল কৃষ্ণ অধিকারী।
সিম্পোজিয়ামে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী ও বারডেমের অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান, অধ্যাপক ডা. এম আইয়ুব আলী চৌধুরী।