দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নামমাত্র জামানতে ঋণের নামে শত শত কোটি টাকা লোপাট এবং বন্ড সুবিধায় আনা সুতা ও কাঁচা মাল খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগ তদন্ত চেয়ে করা রিটকারী মাদরাসা শিক্ষককে মামলা প্রত্যাহারে চাপ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি শিল্প গ্রুপের বিরুদ্ধে। মামলা প্রত্যাহারে রাজী না হওয়ায় পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তদন্তাধীন রাজনৈতিক মামলায়। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গ্রেফতার মো: দেলোয়ার হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় গারাংগিয়া ইসলামীয়া রব্বানী মহিলা ফাজিল-স্নাতক মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক মো: দেলোয়ার হোসাইন। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর সরদানিপাড়ার মৃতছিদ্দিক আহমদের পুত্র।

শিক্ষক দেলোয়ার প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবারও শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছিলেন। এ সময় লোহাগাড়া থানার ওসি মো: আতিকুর রহমান পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া থানার পুলিশের সহযোগিতায় মাদরাসা ঘেরাও করেন। সাতকানিয়া থানা পুলিশের এসআই মাজহারুল ইসলাম ও লোহাগাড়া থানার এসআই সত্যজিৎ প্রথম দেলোয়ার হোসাইনের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এ সময় পুলিশ তার কাছ থেকে ভাই আনোয়ার হোসাইন ও হারুন কোথায় আছে জানতে চান। পরে তাকে প্রস্তাব দেয়া হয়, নোমান গ্রুপ অব কোম্পানি লি:র সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে। প্রস্তাবে সম্মত না হলে পরিণতি ভয়াবহ হবে-মর্মে পুলিশ সদস্যরা চাপ সৃষ্টি করেন। জীবন থাকতেও তিনি দুই ভাইয়ের অবস্থান জানাবেন না। আপস-রফারও কোনো বিষয় নেই বলে জানান দেলোয়ার। এতে ক্ষিপ্ত পুলিশ সদস্যরা দেলোয়ার হোসাইনকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে গুম করার চেষ্টা চালায়। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তড়িঘরি করে পুলিশ তাকে একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে চালান দেয়া হয়। যে মামলায় দেলোয়ারকে গ্রেফতার দেখানো হয় সেইএজাহারে দেলোয়ারের নাম নেই। মামলাটি দায়ের হয় গত ৮ ডিসেম্বর। ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে, রাত ২ টা ৩০ মিনিট। অথচ উল্লেখিত সময়ে দেলোয়ার নোমান গ্রুপেরই দায়েরকৃত আরেক মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেলোয়ার হোসাইনকে আটকের পর পুলিশ সদস্যরা তার সামনেই কয়েক বার নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান মো: নূরুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক শহিদুল্লাহ চৌধুরী এবং আবুল কাসেম চৌধুরীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন।

এদিকে দেলোয়ার হোসাইনের স্ত্রী মায়মুনা আক্তার জানান, মাদরাসা শিক্ষক দেলোয়ার হোসাইন তার দুই ভাই এবং পরিবারের একাধিক সদস্য নোমান গ্রুপের ধারাবাহিক নিগ্রহ ও নিষ্ঠুরতার শিকার। ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে মায়মুনা বলেন, দেলোয়ার হোসাইনের ছোট ভাই হারুন এক সময় নোমান গ্রুপে চাকরি করতেন। এ সময় তাকে দিয়ে জালিয়াতিসহ অবৈধ কর্মকা- করানোর চেষ্টা করেন নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসাইনের চাচা সম্পর্কিত মো: নূরুল ইসলাম এবং তার কর্মকর্তারা। কিন্তু তাতে তিনি সম্মত না হওয়ায় হারুনকে চাকরিচ্যুত করে। হারুনের পাওনা প্রায় ৩ কোটি টাকাও আত্মসাৎ করেন নূরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির বহুবিধ জালজালিয়াতি ও অর্থনৈতিক অপরাধের তথ্য ফাঁস করে দেবে-এই ভয়ে প্রথম হারুনের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিতে থাকেন। এসব মামলায় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে দিয়ে তাকে একাধিকবার গ্রেফতার করানো হয়। ঘন ঘন তারিখ ফেলে এক সময় একতরফা রায় করিয়ে নেয়া হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর হারুন জামিনে মুক্তি পান। এরপরও তাকে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়। হারুন এখন জীবীত আছেন নাকি এরই মধ্যে মেরে ফেলা হয়েছে-আমরা জানি না। সম্প্রতি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নতুন এক মামলায় হারুনের অনুপস্থিতিতে একতরফা রায় করিয়ে নিয়েছে নোমান গ্রুপ। এতে হারুনের ১০ বছর কারাদ- হয়েছে বলে শুনেছি। হারুনকে না পেয়ে তার নিরীহ দুই বড় ভাই ও ভাগিনার বিরুদ্ধে নোমান গ্রুপ একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে চলেছে। তারা বসবাস করেন চট্টগ্রাম, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে ঢাকায়। এসব মামলায় দেলোয়ার ও আনোয়ার হোসাইন জামিনে আছেন। তবে

মাসে একাধিকবার তাদের ঢাকায় দৌড়াতে হয়। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান মো: নূরুল ইসলামের রোষানলে পড়ে মামলার পর মামলা খেয়ে পরিবারটি নি:স্ব হয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে প্রাণসংহার, খুন, গুম ও হামলা-মামলার ভয়ে কোনো পুরুষ সদস্য ঘরে ঘুমাতে পারেন না।

তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সম্প্রতি দেলোয়ার হোসাইনের ভাই আনোয়ার হোসাইন ২টি রিট (নং ১০৭১৬/২০২২ এবং ১০৭১৭/২০২২) করেন। এতে যারপর নাই ক্ষিপ্ত হয় নোমান গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির মালিকগণ এখন মিথ্যা মামলা দিয়ে চাপ সৃষ্টি করছেন রিট প্রত্যাহার করে নিতে।

এদিকে নোমান গ্রুপের ফরমায়েশে দেলোয়ার হোসাইনকে গ্রেফতারের অভিযোগ অস্বীকার করেন লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান। টেলিফোনে তিনি বলেন, দেলোয়ার হোসেনকে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের কোনো চাপ দেয়া হয়নি।