আগ্রাসী ক্রিকেটের মন্ত্র জপা ইংলিশদের সামনে বাংলাদেশ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সাকিব আল হাসান বলটা ছুড়েই বারবার দেখছিলেন ‘ল্যান্ডিং’টা ঠিকঠাক আছে কি না। পাশে দাঁড়ানো কম্পিউটার অ্যানালিস্ট শ্রীনাবসনের সঙ্গেও তার কথা হচ্ছিল টুকটাক।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ থেকে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা এখন অবধি থামেনি খুব একটা। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান...ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারা দেশের তালিকাটা বেশ লম্বা। বাকি কেবল ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালে সর্বশেষ এসেছিল তারা, সেবার হারানো যায়নি। এরপর থেকে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ হারেনি কোনো ওয়ানডে সিরিজ।
এই ফরম্যাটে ভাবনাটা বেশ পরিষ্কার- প্রথম ১০ ওভার দেখো, এরপর রান করো। এমন ‘ফর্মুলা’তে সাফল্যও এসেছে। কিন্তু এবার সিরিজ শুরুর আগে আলোচনা ভিন্ন, তিন ফরম্যাটেই রীতিমতো ‘রেভ্যুলেশন’ নিয়ে আসা ইংলিশরা সামনে। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের পরিকল্পনা আদতে কেমন হবে?
অন্তত আগ্রাসী যে হচ্ছে, এ ব্যাপারে কোনো সংশয় রাখেননি হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে; তিনি অবশ্য ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘আমি প্রথমবার দায়িত্বে থাকার সময়েও আগ্রাসী ক্রিকেটই খেলেছি। আপনারা কেবল ব্যাটারদের আক্রমণই দেখেন। মাঠের বাইরে পাঠানো ছাড়াও আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার অনেকগুলো ধরণ আছে। এটা হচ্ছে আমাদের মনোভাবের ব্যাপার, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে আমরা আগ্রাসী থাকবো। ’
এই ‘আগ্রাসী’ হওয়ার অনেকটা বড় অংশজুড়ে যে স্পিন থাকবে, এটা হাথুরুসিংহে বুঝিয়েছেন আগেই। নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ নিয়ে প্রশ্ন শুনে রেগেই গিয়েছিলেন তিনি। এসব ইংল্যান্ডেরও অজানা নয়। দলটির অধিনায়ক জস বাটলার ‘কঠিন কন্ডিশনে নিজেদের পরীক্ষা’ করতে চান বিশ্বকাপ সামনে রেখে।
তার আগে প্রস্তুতিতেও তোড়জোর ছিল স্পিনকে ঘিরেই। মঙ্গলবারই যেমন, ইংল্যান্ডের পেসাররা যখন মূল মাঠে স্পট বোলিংয়ে ব্যস্ত; দাভিদ মালান, মঈন আলীদের প্রস্তুতি তখন একাডেমিতে স্পিনারদের ঘিরে। তাদের নেটে কোনো পেসারই ছিলেন, বল করেছেন স্পিনার ও থ্রোয়াররা।
বাংলাদেশের পেসাররাও আসেননি মাঠে। সাকিব আল হাসানের কথা তো আগেই বলা হয়েছে, ছিলেন তাইজুল ইসলামও। তাকে মূল মাঠে বোলিংও করতে দেখা গেছে কোচ রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে। ইংল্যান্ডকে কঠিন স্পিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে, এটা মোটামুটি স্পষ্ট। এমন জায়গাতেও কি ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট চলবে?
প্রশ্নটা করা হয়েছিল দলটির অলরাউন্ডার মঈন আলীকে। তিনি শুনে বলছিলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই চলবে। আমরা পুরো পৃথিবীজুড়েই এমন খেলেছি। এটা আলাদা চ্যালেঞ্জ, হয়তো ভিন্ন পরিকল্পনাও থাকবে। কিন্তু মাইন্ডসেট সবসময়ই এক। আর যদি কেউ খারাপ বল করে, যেমন উইকেটই হোক, আপনি চেষ্টা করলে মারতে পারবেন। এখানে ভালো খেলার মতো ক্রিকেটার আমাদের আছে। ’
মঈন আলীর উচ্চকণ্ঠ অবশ্য ওয়ানডেতে করার খুব বেশি জায়গা নেই। সর্বশেষ ১০ ম্যাচের কেবল দুটিতে জিতেছে তারা, সাত হারের সঙ্গে এক ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবশেষ খেলা ওয়ানডেতে জয় পেয়েছে ৫৯ রানে। বিপরীতে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে দারুণ করছে অনেকদিন ধরেই।
১০ ম্যাচের সাতটিতেই পেয়েছে জয়ের দেখা। সর্বশেষ ম্যাচে অবশ্য ভারতের বিপক্ষে হারতে হয়েছে বড় ব্যবধানে। তবে প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশই। ঘরের মাঠেও টাইগাররা শক্তিশালী লম্বা সময় ধরে। এত সব মাথায় রেখে ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ সিরিজে ফেভারিট কে? এমন প্রশ্ন শুনে মঈন টানলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়াকে।
ফেভারিটের প্রশ্নে অবশ্য তার উত্তর ‘এটা এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। ’ মঈন আলীর কথাতে স্পষ্ট, বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই-ই তার প্রত্যাশায়। বাংলাদেশ নিশ্চয়ই চাইবে সবকিছুর পর জয়টা তাদেরই হোক। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানো গেলে বিশ্বকাপের আগে এটা যে বড় ‘বুস্ট-আপ’ হবে, তাতে কোনো সংশয় নেই।