ক্যালিগ্রাফি নিয়ে তরুণদের কাছে প্রত্যাশা
মোহাম্মদ আবদুর রহীম
আজ (৮ মার্চ) শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্পোযোগ আয়োজিত তৃতীয় ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং প্রদর্শনী ২০২৩ এর শেষ দিন ছিল। পাঁচ দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে প্রায় ২০০ নবীন প্রবীণ আঁকিয়ে তাদের রং ও তুলির মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন।
এই প্রদর্শনীতে মাত্র দুইজনের "ক্যালিগ্রাফি কলম "-এর ৭টি কাজ ছিল। আরিফুর রহমানের দুইটি এবং আমি মোহাম্মদ আবদুর রহীম-এর এক ফ্রেমে ৪টি ও অন্য ফ্রেমে ১টি মোট ৫টি কাজ, এগুলো ভেতরের নকশাসহ সম্পূর্ণ ক্যালিগ্রাফি কলমের কাজ। বাকি সবগুলো কাজ ছিল পেইন্টিং।
মাশাআল্লাহ। প্রদর্শনীর কাজগুলো বেশ সুন্দর হয়েছে । কিছু কিছু কাজ যেগুলো একেবারে নবিশ, তারাও চেষ্টা করেছে ভালো কাজ করার । হয়তো কয়েক বছর পর এদের কাজ অনেক সুন্দর হবে। আর কিছু কিছু পেইন্টিং অনেক সুন্দর হয়েছে কিন্তু কম্পোজিশন, হরফের সেইফ ও সাইজগুলো কাঁচা ধরনের। আশা করা যায়, তাদের ক্যালিগ্রাফি ফন্ট স্টাইল তাদের নিজেদের পরিচয়কে তুলে ধরবে।
এখানে সবচেয়ে যে জিনিসটি চোখে লেগেছে, তা হল সব কাজগুলো একনজর দেখলে মনে হবে এটা একক প্রদর্শনী, দলগত প্রদর্শনী নয়, কারণ রং, রংয়ের বিন্যাস, রং প্রয়োগের কৌশল এবং যেই শৈলীগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তা একই রকম এবং তাতে ক্যালিগ্রাফি শৈলীর আসল বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে নাই, সাধারণ দর্শকের দৃষ্টিতে ছবিগুলো খুবই ভালো । কিন্তু মানসম্মত প্রদর্শনীর জন্য আরো আরো সুন্দর কাজ করতে হবে, তবে আশার কথা হল, এখানে অনেক প্রতিভাবান ছেলে মেয়ের কাজ আছে। কেউ হয়তো নবিশ পর্যায়ের কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে এরা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করতে পারবে।
ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে তথ্য ও তথ্যগত এবং জ্ঞানগত বিষয়টি এখানে যাদের সাথে আলাপ করেছি তাদের অধিকাংশই কিছুই জানেন না, ক্যালিগ্রাফি শিক্ষার প্রাথমিক যে ক্লাসগুলো আছে, সেগুলোতে যা পড়ানো হয়, সে বিষয়ে এরা কিছুই জানে না এজন্য ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে এদের পরিষ্কার কোন ধারনা নেই ।
কোনটা ক্যালিগ্রাফি, কোনটা টাইপোগ্রাফি, কোনটা লেটারিং, এরা তা জানে না। অনেকে ক্যালিগ্রাফি কলম, কালি, কাগজ সম্পর্কে কোন ধারনাই রাখেন না, তারপরও এখানে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, এদের অনেকে মৌলিক ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে আগ্রহী এবং বিশ্ব দরবারে ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী- এটাই আশার কথা । প্রত্যাশা করা যায়, এ ধরনের প্রদর্শনী যত বেশি হবে, তত ক্যালিগ্রাফির ক্লাসিক বা ধ্রুপদী ধারা এবং এর মৌলিক জ্ঞান তারা আয়ত্ত্ব করতে সক্ষম হবেন। ভবিষ্যৎ বিশ্বমানের ক্যালিগ্রাফার পরবর্তী প্রজন্ম থেকে উঠে আসুক এটাই দেশ ও জাতির প্রত্যাশা।
লেখক: আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফার ও পিএইচডি গবেষক
(দ্যা রিপোর্ট/একেএমএম/ মার্চ ০৮, ২০২৩)