রেমিট্যান্স বেড়েছে,কমেছে রপ্তানি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ ছয় মাস পর মার্চে আবার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
এ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২০২ কোটি ডলার। এদিকে মার্চে রপ্তানি আয়ও সামান্য বেড়েছে। তবে গত অর্থবছরের মার্চের তুলনায় কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশে এর আগে ২০২২ সালের আগস্টে সর্বশেষ ২০৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপর রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ কমতে থাকে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ২০০ কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এদিকে মার্চে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৬৩ কোটি ডলার। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলারের নিচে রয়েছে।
সূত্র জানায়, রোজা ও ঈদের কারণে এ মাসেও রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। তবে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রপ্তানি খাতের কাঁচামালের এলসি খোলা কমেছে ৩৪ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১০ শতাংশ। রপ্তানির আদেশ কমায় কাঁচামালের আমদানি ও এলসি খোলা দুটোই কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আগামীতে।
দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার ২৮ শতাংশ আসে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। আর রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে আসে ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ মোট বৈদেশিক মুদ্রার আড়াই গুণ আসছে রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে। বাকি ২ শতাংশ আসে অন্যান্য খাত থেকে। এর ফলে রপ্তানি আয় কমে গেলে সার্বিক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা চাপে পড়বে। কারণ তখন ডলারের সংকট আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চে রেমিট্যান্স এসেছে ২০২ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ১৫৬ কোটি ডলার। এক মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪৬ কোটি ডলার। গত বছরের মার্চে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার। ওই সময়ের তুলনায় এ মার্চে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৬ কোটি ডলার।
গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের ওই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭৩ কোটি ডলার।
গত মার্চে মোট রেমিট্যান্সের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭৩ কোটি ১৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৫ লাখ ২০ হাজার ডলার।
গত মার্চে আট ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো প্রবাসী আয় দেশে আসেনি। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
মার্চে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০২ কোটি ডলার, অর্জিত হয়েছে ৪৬৪ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি সাড়ে ৭ শতাংশ কম হয়েছে। গত বছরের মার্চে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৭৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের মার্চের তুলনায় এ মার্চে আড়াই শতাংশ প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে।
রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ধাক্কা : গত কয়েক মাস প্রবৃদ্ধি বাড়লেও আয়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জনে ধাক্কা খেতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) রপ্তানি আয় হয়েছে ৪১৭২ কোটি মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছিল ৩৮৬০ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৮.০৭ শতাংশ। তবে নয় মাসে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪২২৬ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১.২৮ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে আরও বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) প্রথম নয় মাসে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৪১০ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৩৫২৫ কোটি ডলার। আয় বেশি হয়েছে ৩.৩৭ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছিল ৩১৪২ কোটি ডলার। ওই সময়ের তুলনায় এবার প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১২.১৭ শতাংশ। একইভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০৪ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৯১ কোটি ডলার। আয় কম হয়েছে ১২.৩৫ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছে ৮৯ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২.৫৬ শতাংশ।
উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪০৭৮ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৪০৬৮ কোটি ডলার। আয় কমেছে শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময় আয় হয়েছিল ৩৭২১ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৯.৩৪ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ১৫ কোটি ডলার। আয় বেশি হয়েছে ৬.১৫ শতাংশ। গত অর্থবছর একই সময় আয় হয়েছিল ১১ কোটি ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩৪.০৭ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি কোনোটাই অর্জন হয়নি।