সিমটেক্সে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠান সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়ে ষড়যন্ত্র আটকে দিল হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে স্বস্তি ফিরেছে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ, কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ এটিকে সত্য ও ন্যায়ের জয় বলে অভিহিত করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছেন। পাশাপাশি তারা বর্তমান পর্ষদের প্রতি আস্থা রাখার জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। সিমটেক্সের বর্তমান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. সরোয়ার হোসেনের করা মামলায় গত ২ এপ্রিল উচ্চ আদালতের বিচারপতি মাহামুদুল হক ও বিচারপতি মাহামুদ হাসান তালুকদার বিএসইসির দেওয়া পাঁচজনের পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগে ৬ মাসের এ স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
সিমটেক্সের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সুত্রে জানা গেছে সিমটেক্সের পদচ্যুত চেয়ারম্যান আনিস অত্যন্ত সুকৌশলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমানের কাছ থেকে ২% শেয়ার হাতিয়ে কোম্পানিটির মাথায় চড়ে বসেন। অথচ শীর্ষ পদে বসার আগে ২০১৭ সাল থেকে তিনি এই কোম্পানীতে বেতনভুক্ত একজন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। সর্বশেষ তিনি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনকে ভুল বুঝিয়ে সম্পূর্ন বিধি বহির্ভূতভাবে কোম্পানিটিতে চেয়ারম্যানসহ নতুন ৫ জন বহিরাগতকে পরিচালক পদে নিযুক্ত করে পিছনে থেকে সিমটেক্সকে পুনরায় অধিগ্রহনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। নিয়োগপ্রাপ্ত ৫ স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) শেখ মামুন খালেদ (চেয়ারম্যান), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সুবোধ দেব নাথ, দ্য জুরিস্টের পার্টনার কাওসার আহমেদ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আবদুল কাইয়ুম ও ব্যবসায়ী আবিদ আল হাসান।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ও বাংলাদেশের কোম্পানী আইনে নিবন্ধিত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় সরকার কতৃক নির্ধারিত বিধিবিধান দ্বারা। কিন্তু, দেখা গেছে পদচ্যুত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সিমটেক্স পরিচালনার ক্ষেত্রে সেসব আইনকানুন না মেনে কোম্পানি চালানোর অভিযোগ আছে । অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিমাসে সন্মানী বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা করে রসিদের মাধ্যমে গ্রহন করেছেন। যেখানে জয়েন্ট স্টক অব কোম্পানীজ কতৃক প্রনীত বিধান অনুযায়ি এই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রতিমাসে মাত্র ৫০ হাজার টাকা সন্মানী গ্রহন করতে পারেন সেখানে লেঃ কর্নেল আনিস গায়ের জোরে তার দশগুণ বেশী টাকা রশীদের মাধ্যমে গ্রহন করেছেন। যেটা সম্পূর্ন বিধি বহির্ভূত।সাবেক এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এসকল অনিয়মের হাত থেকে প্রতিষ্টানটিকে রক্ষা করে সিমটেক্সকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে এনে কারখানা অভ্যন্তরে কর্মীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে গত বছরের অর্থাৎ ১৭ আগষ্ট ২০২২ কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতভাবে আনিসকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারন করে নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। এরপরে কর্নেল আনিস আদাজল খেয়ে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করার জন্য প্রকাশ্যে উঠে পড়ে লেগেছেন বলে কোম্পানি সুত্রে জানা গেছে। প্রথমত, তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে গায়ের জোরে দখলে নেয়ার জন্য গত বছরের ৩১ আগষ্ট ২০২২ ফিল্মি কায়দায় বেশকিছু ভাড়াটিয়া অস্ত্রধারি লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক সিমটেক্সে ঢুকে তান্ডব চালান ও কারখানাটি দখলের অপচেষ্টা চালান। সাভার থানা পুলিশের তড়িৎ পদক্ষেপে আনিসের এই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং পুলিশ বেশকিছু অবৈধ অস্ত্রসহ তাকে আটক করে জেলে প্রেরন করে। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করলে তিনি বেশ কিছুদিন জেল খাটেন।কোম্পানি সুত্রে জানা গেছে জেলখানা থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কর্নেল আনিস বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং যেকোন প্রকারে সিমটেক্সের ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি ইতিমধ্যেই পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনের কাছে নানান মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর, মনগড়া ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে ও নানান প্রভাব খাটিয়ে সিমটেক্সকে হয়রানী করে চলেছেন। এছাড়াও তিনি স্বনামে-বেনামে ও বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সিমটেক্সের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এমডিসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নামে ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগে ফৌজদরি মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন। সর্বশেষ তিনি পুজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনকে চরমভাব ভূল বুঝিয়ে সম্পূর্ন বিধি বহির্ভূতভাবে কোম্পানীটিতে চেয়ারম্যানসহ নতুন ৫ জন বহিরাগতকে পরিচালক পদে নিযুক্ত করে পিছনে থেকে সিমটেক্সকে পূনরায় অধিগ্রহনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তার এই অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত । সিমটেক্সের বর্তমান চেয়ারম্যানের করা মামলায় হাইকোর্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড একচেঞ্জ কমিশনের দেয়া ৫ জনের পরিচালনা পর্ষদকে স্থগিত করেছে। আর এতেই স্বস্তি ফিরেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ, বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিশনের বিভিন্ন কোম্পানিতে এমন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। যাদের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা নেই। যে কারণ এরই মধ্যে অনেক কোম্পানিতে কমিশনের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে পর্ষদ পুনর্গঠন মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেমনটি হতে যাচ্ছিল সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজও। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তে রক্ষা পেলো কোম্পানিটি।