ক্রিমিয়া উপকূলে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের আশঙ্কা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন দিকে মোড় নিতে পারে। যেকোনো সময় রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে আক্রমণ চালাতে পারে ইউক্রেন। তবে বসে নেই রাশিয়াও। বিষয়টি আগাম অনুমান করে ক্রিমিয়ায় সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করছে তারাও। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
বিশেষ সূত্র থেকে পাওয়া স্কাইস্যাট স্যাটেলাইটের চিত্র যাচাই করে দেখেছে আল জাজিরা। গত ১ এপ্রিল চিত্রটি নেয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছে, ক্রিমিয়া উপদ্বীপে সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করছে রাশিয়া। দেশটির আশঙ্কা, ক্রিমিয়া পুনর্দখলে যেকোনো সময় আক্রমণ চালাতে পারে ইউক্রেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অবস্থায় ইউক্রেন যদি ক্রিমিয়ায় আক্রমণ চালায়, তবে তা কেবল আরও একটি রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র বাড়াবে। রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ সংযুক্ত করে নেয়। তার ঠিক আট বছর পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার এক সামরিক অভিযান শুরু করে। যুদ্ধ যতই গড়াতে থাকে, ইউক্রেনীয় নেতারা ততটাই জোর দিয়ে বলতে থাকেন যে, এ যুদ্ধ তখনই শেষ হবে যখন তারা ১৯৯১ সালের সীমানা ফিরে পাবে। এর সহজ অর্থ হলো ইউক্রেন ক্রিমিয়া ফেরত চায়।
আল জাজিরার সহযোগী সনদ নিউজের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে রাশিয়া ক্রিমিয়ায় ইউক্রেন সীমান্তের কাছে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে পরিখা, বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা বাধা তৈরি করা হয়েছে ক্রিমিয়ার ইউক্রেন সীমান্তের গ্রামগুলোতে। নতুন করে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে। পুরনো ঘাঁটিগুলো সংস্কার এবং বর্ধিত করা হয়েছে। এছাড়া, নৌ-প্রতিরক্ষায়ও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ক্রিমিয়ার কর্তৃপক্ষ রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর নেভাল ফ্লিটের জন্য সেভাস্তুপোল বন্দর প্রস্তুত রেখেছে। বন্দরটিতে নতুন বেশ কয়েকটি অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর নেভাল ফ্লিটকে সহায়তা দেয়ার জন্য।
নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল গার্ডিয়ানের সিনিয়র ইন্টেলিজেন্স এনালিস্ট জেভ ফেইনটাচ বলেছেন, ক্রিমিয়ার উত্তরাঞ্চলের তৈরি করা পরিখাগুলো থেকে দেখা যাচ্ছে যে, রাশিয়া সেখানে ইউক্রেনের স্থল আক্রমণের আশঙ্কা করছে এবং সে মোতাবেক তা ঠেকানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। তিনি এ সময় জানান, কোনো পরিখাই শতভাগ সম্পন্ন হয়নি। গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ ভ্যালেরি জালুঝনি এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিখাইলো জাব্রোদস্কি একটি কৌশলপত্র লেখেন। সেখানে তারা ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ‘ভারকেন্দ্র’ হিসাবে বর্ণনা করেন। বলেন, এটি রাশিয়ার দখলে থাকার কারণেই রাশিয়া ইউক্রেনকে হুমকি দিতে সক্ষম হয়েছে।
সেই কৌশলপত্রে জেনারেলরা আরও লেখেন, ২০২৩ সালে উপদ্বীপ দখল করার জন্য একটি সিরিজের অপারেশনের পরিকল্পনা করা খুবই যুক্তিসঙ্গত। ইউক্রেনের ‘দশ থেকে বিশটি সম্মিলিত সামরিক ব্রিগেড প্রয়োজন’। তবে এক্ষেত্রে এখনো নানা প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ইউক্রেনের কাছে পর্যাপ্ত সেনা এবং গোলাবারুদ রয়েছে কি না, যা দিয়ে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার বিপরীতে একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে।