বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগের মতো আর নির্বাচন হবে না: দিলীপ বড়ুয়া
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদ- লেনিনবাদ) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শিল্প মন্ত্রী ছিলেন। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন দ্য রিপোর্টের সাথে। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগের মতো আর নির্বাচন হবে না।
বলেছেন ভূ-রাজনীতির কারণে বাংলাদেশ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা
আরেকবার ক্ষমতাসীন হলে এই অঞ্চলে চীন, রাশিয়া ও ভারতের প্রভাব আরো বৃদ্ধি পাবে, তাই তার
ক্ষমতা প্রলম্বিত হোক তা কোনো অবস্থাতেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব চাইতে পারে না।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় দলীয় কার্যালয়ে সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন দিলীপ বড়ুয়া।সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন দ্য রিপোর্ট সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু। সহযোগিতায় ছিলেন স্টাফ রিপোর্টার মাহি হাসান।
দ্য রিপোর্ট: দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?
দিলীপ বড়ুয়া: একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা অন্যদিকে রাজনৈতিক
দলগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক আস্থাহীনতা, কাদা ছুড়াছুড়ি, একে অন্যর প্রতি অসহিঞ্চুতা ; ফলশ্রুতিতে
রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকারি জোট ও বিরোধীদলীয় জোটের কর্মকান্ডে জনগণের মধ্যেএক ধরণের ভীতি ও আস্থাহীনতার বহি:প্রকাশ ঘটছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমাদের আগামী নির্বাচনকোনো অবস্থাতেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো হবে না। বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগের মতো আর নির্বাচনহবে না। কিন্তু সরকার যে কোনো মূল্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায়। তবে এই সরকারের অধীনে বিএনপিরনির্বাচনে না যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। এর আগে জনগনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রন ছিলো, অন্যদিকেসরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা বিরাজকরছে।কাজেই জনগণ যদি কোনো বিস্ফোরন্মুখ পরিস্থিতির মুখে পড়ে তাহলে কোনো অবস্থাতেই এটাকেসরকার নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না।
দ্য রিপোর্ট : এ ধরণের পরিস্থিতির কতটা আশঙ্কা করছেন?
দিলীপ বড়ুয়া: এই আশঙ্কাইতো দেখছি। চুড়ান্ত পরিস্থিতিতে এই আশঙ্কাই বেশী। আমাদের দেশের
অভ্যন্তরীণ সংকটের সাথে যুক্ত হয়েছে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা । এতে নতুন মাত্রা যোগকরেছে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ। বিশেষ করে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাজোট প্রকাশ্যভাবে অবাধ ওসুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবধিকারের নামে আমাদের দেশের রাজনীতিতে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে। কাজেইআগামী রাজনীতির দিনগুলো অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে। এবং এই পরিস্থিতিতে অবাধ শান্তিপূর্ণনির্বাচন কতটুকু হবে তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট যদিনির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবার অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে। তবে নির্বাচনঅনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হলেও এতে বিএনপির লাভবান হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাতে শুধু তারাআত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ এপ্রিল জাতীয় সংসদে যে ভাষণ দিয়েছেন তা ঐতিহাসিক ও তাঁররাজনৈতিক জীবনের বলিষ্ঠ বক্তব্য। সাহসিকতাপূর্ণ বক্তব্য। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের নেত্রী হিসেবেমাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বিশ্বের পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে অঙ্গুলী নির্দেশ করে বক্তব্যদিয়েছেন তা সমসাময়িক তৃতীয় বিশ্বের কোনো সরকার প্রধান দিতে পারবে কী-না আমার সন্দেহ আছে। এইবক্তব্যের জন্য দেশের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেপ্রধানমন্ত্রীকে বীরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া উচিত। আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে এই বক্তব্য দিয়েছেন। অর্থাৎ ‘বাঁচলে গাজী মরলে শহীদ ’এই চেতনাটা উনার মধ্যে কাজ করেছে। উনি যদি সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য জনগণের দরবারে হাজির হন তবে তাঁর নেতৃত্বে আসন্ন সংকট উত্তরণের সমূহ সম্ভাবনা আছে। কারণ বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের জনগণ ছাড়াও চীন , ভারত ও রাশিয়া ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার পাশে রয়েছে।
দ্য রিপোর্ট : বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের এতো গুরুত্ব বৃদ্ধির কারণ কী?
দিলীপ বড়ুয়া :ভূ-রাজনীতির কারণে বাংলাদেশ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরেকবার ক্ষমতাসীন হলে এই অঞ্চলে চীন , রাশিয়া ও ভারতের প্রভাব আরো বৃদ্ধি পাবে, যা বর্তমান বাস্তবতায় মার্কিনীদের অনুকূলে নয়। বিধায় যেকোনোভাবে বিভিন্ন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। তার ক্ষমতা প্রলম্বিত হোক তা কোনো অবস্থাতেই পশ্চিমা বিশ্ব চাইতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী এটা উপলব্ধি করেই জনগণের ওপর নির্ভর করে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছুতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
দ্য রিপোর্ট: অভিষ্ট লক্ষ্য বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?
দিলীপ বড়ুয়া: যেকোনো উপায়ে তিনি ক্ষমতায় যেতে চান। তবে ইতোমধ্যে দলের একটা অংশের লুটপাট ,সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, চাঁদাবাজি জনগণের আস্থায় বড় ধরণের ফাটল ধরিয়েছে। বড় বড় কায়েমী গোষ্ঠীর ব্যাংক লুট ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মনে হয় সরকার অসহায়। এই অপশক্তি সরকারকে জিম্মি করে ফেলেছে। এই জায়গায় মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গণতন্ত্রমনা মানুষের আস্থাহীনতার সংকট সৃষ্ঠি হয়েছে। তবে এর বিপরীতে বিএনপি যে আন্দোলন করছে তাতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। একদিকে তাদের নেতৃত্বের সঙ্কট , অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দলটির উপর ভর করেছে। যার পরিণতিতে কোনো কারণে সরকারের পরিবর্তন হলে চরম দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটার সমূহ আশঙ্কা আছে।
দ্য রিপোর্ট: আপনাকে ধন্যবাদ।
দিলীপ বড়ুয়া: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
(দ্য রিপোর্ট/ টিআইএম/ মাহা/১২ এপ্রিল,২০২৩