রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বে আলোচিত হওয়া রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে সোমবার। সেদিনের ঘটনায় আহত শ্রমিকদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক ক্ষতিপূরণ দিয়েই দায় সেরেছে সরকার এবং বিজিএমইএ। অথচ এরই মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে সেই দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকরা যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছেন না টাকার অভাবে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১হাজার ১৩৫ জন নিহত ও ১ হাজার ১৬৯ জন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। তাদেরই একজন জেসমিন আক্তার বলেন, ১০ বছরেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের ক্ষত এখনও শুকায়নি। সঙ্গে যোগ হয়েছে আর্থিক অনিশ্চয়তা। এখনও প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার ওষুধের যোগান দিতে হয়। খরচে যোগানের চাপ সইতে না পেরে ছেড়ে গেছেন স্বামীও।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। এছাড়া ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অন্য দুটি মামলা করে। তবে কোনো মামলারই বিচার শেষ হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, এখনও মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
অভিযোগপত্রের দুই আসামি মারা যাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আসামি ৩৯ জন। তাদের মধ্যে রানা প্লাজার মালিকের ছেলে সোহেল রানা কারাগারে। এছাড়া সাত আসামি পলাতক ও বাকি ৩১ আসামি জামিনে আছেন। আবার পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, অনেক সাক্ষীকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বিজিএমইএ এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফারুক হাসানের দাবি, রানা প্লাজার নিহত এবং আহত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আহতদের দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা দেয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই।
গবেষণা সংস্থা একশন এইডের উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইক্যুইটি ম্যানেজার তামাজের আহমেদ বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা ছিলো না। তাই সঠিক চিকিৎসার অভাবে জেসমিনের মতো আহতদের শারীরক এবং মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
রাষ্ট্রপক্ষ রানা প্লাজার মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন গবেষণা সংস্থাটির কর্মকর্তা।
রানা প্লাজা একটি বাণিজ্যিক ভবন হলেও এর ভূগর্ভস্থ তলায় গাড়ি রাখার জায়গা, প্রথম তলায় ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, দ্বিতীয় তলায় বিপণীকেন্দ্র এবং তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা ছিল। এর ওপরের দুটি তলা খালি ছিল।
ঘটনার দিন সকালে মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল তৈরি পোশাক কারখানা। ফলে দুর্ঘটনায় ইট-কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মুহূর্তেই হারিয়ে যায় হাজারেরও বেশি তাজা প্রাণ।
দিনটির নির্মমতা স্মরণ করতে রানা প্লাজার পরিত্যক্ত জমির সামনে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী স্মৃতি সৌধ। সেখানে ফুল দিয়ে আহত এবং নিহতদের শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।