মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট: প্রতিবছরই মুসলমানদের বড় দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়ে এদেশের লাখ লাখ মানুষ তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ করতে গ্রামে শেকড়ের কাছে ফিরে যান। তবে আনন্দের এই যাত্রা সবসময়ই সুখকর হয় তা না; অনেকেরই পরিণত হয় বিষাদে। যাত্রাপথে অথবা ঈদ কাটিয়ে কর্মস্থলে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে অনেকেরই আর নীড়ে ফেরা হয় না। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কম ঘটেছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদ যাত্রায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কম হয়েছে বলে মনে করছে দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি, রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে এমনটাই জানা গেছে।

এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় ২২শে এপ্রিল। শবে বরাতের ছুটি ও ঈদুল ফিতরের ছুটির মাঝে বৃহস্পতিবার অফিস আদালত খোলা থাকার কথা ছিলো। তবে সরকাররের নির্বাহী আদেশে বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষনা করায় এবার ২৭শে রমজান থেকেই মূলত ঈদযাত্রা শুরু হয়।

অন্যবারের চেয়ে এবার তুলনামুলক সময় বেশি পাওয়ায় ভোগান্তি অনেকটা কম হয়েছে বলে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্যমতে, গত ১৮ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দিনে রাজধানী শহর ঢাকা ছেড়েছেন এক কোটির বেশি মানুষ। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেইজে জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন এক কোটি ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৩৯৫ সিম ব্যবহারকারী। এসব মানুষ বাস, রেল, লঞ্চসহ নিজস্ব যানবাহন ও মোটরসাইকেলে করে তাদের গন্তব্যে গেছেন। অনেকেই ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে ফিরেও আসছেন কর্মস্থলে। গত সোমবার (২৪ এপ্রিল) খুলেছে সরকারি অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় ফিরতি মানুষের বেশ চাপ পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। আজও (শনিবার) ফিরবেন অনেকে।

এবার দীর্ঘ ছুটি ও সড়ক মহাসড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তীক্ষ্ণ নজরদারির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া মানুষের যাতায়াত এবার তুলনামূলক স্বস্তির হয়েছে। তবে ফেরার পথে যানবহনের চাপ বাকি দুইদিনে অনেকটা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা ঈদ যাত্রার দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩ হাজার ৮৭৭ জন। গত ছয় বছরে ঈদুল ফিতরের ঈদ যাত্রায় মারা যান ১ হাজার ৯৭৯ জন। ঈদুল আজহার ঈদ যাত্রায় মারা যান ১ হাজার ৮৯৮ জন। ২০২২ সালে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৩ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে সারা দেশে ৩১৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত হয়, ৭৭৪ জন আহত হয়। সে সময় দুর্ঘটনার শীর্ষে ছিল মোটরসাইকেল। এ ছাড়া, ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ২০২২ সালে ঈদ যাত্রায় ৩৭২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৪১৬ জন। এসময় আহত হয় ৮৪৪ জন। এরমধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৪৫ জন। এবার ঈদুল ফিতরের দিন দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৩ জন। শনিবার (২২ এপ্রিল) পৃথক পৃথক সময়ে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের বেশিরভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, “দুর্ঘটনার বিষয়গুলো নিয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। ঈদের ছুটি শেষে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং সড়কের মৃত্যুর বিষয় সম্পর্কে আমরা সঠিক তথ্য দিতে পারবো। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কম হয়েছে বলে ধারণা করছি। প্রোপার নজরদারী কমাতে পারে দুর্ঘটনা এটাই প্রমাণিত হলো এই বছর”।

এদিকে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “এবার আমরা একটা ভোগান্তিহীন ঈদ উদযাপন করতে পেরেছি। ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য এর চেয়ে ভোগান্তিহীন যাত্রা অনেক বছর ধরে হয়ে উঠেনি। এবারের ঈদুল ফিতরের যাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক”। গত সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, "হাইওয়েতে বিশেষ করে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে প্রশাসন যেভাবে মোটরসাইকেল চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা জারি ও তা মেনে চলতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় এবার কমেছে সড়ক দূর্ঘটনা। এরুপ সারা বছর জারি থাকলে সড়ক প্রাণ হারানোর হার কমে আসবে। ঈদ শেষে গ্রাম থেকে ফেরা মানুষগুলোর যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর থাকতে হবে"।

এবার ঈদের ছুটি শুরুর আগেই অনেকে গ্রামে চলে যাওয়ার কারণে মহাসড়কগুলোতে এবছর যানজটের সংখ্যা ছিল কম। এসব বিষয় মাথায় রেখে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নিলে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ অনেকাংশেই সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা জাগ্রত হলে সড়কে প্রাণ হারানো অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

(দ্য রিপোর্ট/ মাহা/ ২৯ এপ্রিল,২০২৩)