ভর্তি না হয়েই সার্টিফিকেট মিলছে মাত্র ৩ লাখ টাকায়
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে এবং পড়ালেখা ছাড়ায় সার্টিফিকেট মিলছে মাত্র ৩ লাখ টাকায়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটেও যার তথ্য পাওয়া যায়। এমন জাল সার্টিফিকেট বা ভুয়া সনদপত্র চক্রের পেছনে রয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা। ভর্তি এবং লেখাপড়া ছাড়াই জাল সার্টিফিকেট দিতে তিন লাখ টাকা করে নিলেও এটা বানাতে খরচ হয় মাত্র একশ থেকে দেড়শ টাকা।
শুক্রবার (৫ মে) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর লালবাগে অভিযান চালিয়ে ভুয়া সনদপত্র তৈরি চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতু, প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপু।
ডিবি বলছে, চক্রের হোতা প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান। তিনি বিদেশে উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন। দেশে ফিরে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন নকল সার্টিফিকেট তৈরিতে। জিয়া মূলত একজন সহযোগীকে দিয়ে এই কাজ করাতেন। তার নাম ইয়াসিন। আর তাকে এই কাজে সহায়তা করতেন দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ। তারা এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের কাছে এসব জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন।
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে এই সার্টিফিকেট তৈরি হতো। অর্থের বিনিময়ে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়র সার্টিফিকেট তৈরি করতেন চক্রের সদস্যরা। অভিযুক্তরা আগেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও তারা ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরির কাজ শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা এবং এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। চক্রের সদস্যরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট তৈরি করে বিক্রি করতেন।
গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলন, রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন পর্যায়ের একাডেমিক অনেক সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ইনভেলপ ও নগদ টাকা।
তিনি আরও বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে নীরবে বিপুল টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন চলমান এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলেন তারা। পাশাপাশি বিভিন্ন বোর্ডের সেকেন্ডারি (এসএসসি) ও হায়ার সেকেন্ডারি (এইচএসসি) পরীক্ষার মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলেন।
ডিসি মশিউর রহমান বলেন, অনলাইন বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করা হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। তারা সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ট্রান্সক্রিপ্ট ও টেস্টিমোনিয়াল বানিয়ে দেন। যাতে যারা সার্টিফিকেট কেনেন তারা দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন।
এসব জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিটগুলো বোর্ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা মূল কাগজ দিয়েই তৈরি করা হতো। এমনকি সেগুলোকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। যেন পরবর্তীতে অনলাইন ভেরিফিকেশনে সেগুলোর তথ্য পাওয়া যায়।