সি পার্লের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির-হ্রাসের রহস্য কি?
মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট: দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে আলোচিত এক কোম্পানি সি পার্ল বিচ রিসোর্ট ও স্পা লিমিটেডের শেয়ার। শেয়ার মূল্যের অযাচিত বৃদ্ধি, মালিকানা পরিবর্তনসহ নানা কারনে কোম্পানিটির নাম এখন বেশ আলোচিত। এক বছরে এই কোম্পানীটির শেয়ারের মূল্য ৪১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৩২৮ টাকা মধ্যে উঠানামা করেছে।
কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ২৮০ টাকার বেশি লাফ দিয়েছিলো বছর খানেকের মধ্যেই। সম্প্রতি গত ২৫ এপ্রিলের পর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য ক্রমাগত কমছে । গত ২৫ এপ্রিল সি পার্লের শেয়ারের মুল্য ছিলো ৩০৩ টাকা ৫ পয়সা। সেখান থেকে প্রতিদিনই কমতে কমতে সর্বশেষ কার্যদিবসে (৩ মে) দাঁড়িয়েছে ২৫০ টাকা ৬০ পয়সায়। এমনকি এই সময়ে একদিনের ব্যবধানে শেয়ারটির দাম কমেছে ১৫ টাকা বেশি। ২৭ এপ্রিল আগের কার্যদিবসের চেয়ে দাম কমে দাঁড়ায় ২৮৭ টাকা ৫ পয়সায়। সেখান থেকে পরের কার্যদিবসে ৩০ এপ্রিল (রোববার) শেয়ারটির সর্বশেষ লেনদেন হয় ২৬২ টাকা ৪ পয়সায়। সে পতনের ধারা থেকে এখনো বের হতে পারেনি সি পার্ল বিচ রিসোর্ট ও স্পা লিমিটেড।
কিন্তু গত এই দেড় সপ্তাহের আগে সি পার্লের শেয়ার উঠেছিলো আকাশের চূড়ায়। গত এক বছর ধরেই বেড়েই চলছিল কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য। এমনকি গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা স্টক একচেঞ্জ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিলো। এর জবাবে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোন কারন বলতে পারেনি কোম্পানিটি। কোম্পানিটির দেওয়া এ তথ্যের ভিত্তিতে ৭ সেপ্টেম্বর ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে ডিএসইর সেই সতর্ক বার্তা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা রুখতে পারেনি। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছরের ৫ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিলো ৪৬ টাকা ৬ পয়সা। যা চার মাসের মধ্যে লাফ দিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ টাকা ৮ পয়সায়। এরপরে সবচেয়ে বড় লাফ দেয় পরবর্তী সপ্তাহে অর্থ্যাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৭ টাকা ৬ পয়সায়। এরপরে টানা বাড়তেই থাকে। পহেলা নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ১৯০ টাকা ৪ পয়সায়। এরপরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমা-বাড়ার মধ্যে থাকলেও আগের দামে ফেরত যায়নি আর। নভেম্বর মাসের ৯ তারিখ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমে দাঁড়ায় ১৫৮ টাকা ৫ পয়সায়। ডিসেম্বর মাসে ফের বৃদ্ধি পায়। ৭ই ডিসেম্বর দাম বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৭২ টাকা । পরবর্তী সপ্তাহেই যদিও দাম আবার কমে যায়। ১৬৯ টাকা ৯ পয়সায় নেমে আসে ১৩ই ডিসেম্বরে । আবার এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৯০ টাকায়, ডিসেম্বরের ২২ তারিখ। নতুন বছরের (২০২৩) প্রথম দিকে কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও প্রথম সপ্তাহেই আবার বাড়তে শুরু করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম । ৫ই জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২১২ টাকা ২ পয়সায়। শেয়ারের দাম বাড়া-কমার মধ্যেই নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে (২৬শে জানুয়ারি) শেয়ারটির দাম দাঁড়ায় ২৭৫টাকা ১ পয়সায়। ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ সি পার্লের শেয়ারের দাম ২৯৮ টাকা ৯ পয়সা পর্যন্ত বেড়েছিলো। মার্চ মাসে সি পার্লের শেয়ারের দাম উঠে ৩০০ এর ঘরে। মার্চ মাসের ৯ তারিখ ৩২০ টাকা ১ পয়সায় লেনদেন হয় সি পার্লের শেয়ার। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে কিছুটা কমে ৩০০ এর নিচে নেমে আসে। এপ্রিল মাসের ৬ তারিখ শেয়ারটি ২৮১ টাকা ২ পয়সায় লেনদেন হয়। এপ্রিল মাসের ১৬ তারিখ আরো কমে আসে শেয়ারটির দাম। ২৭৬ টাকা ৫ পয়সায় লেনদেন হয় সি পার্লের শেয়ার। এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহের শুরু পর্যন্ত শেয়ারের দাম বাড়ছিল। ২৫শে এপ্রিলেও ৩০৩ টাকা ৫ পয়সায় লেনদেন হয় কোম্পানিটির শেয়ার। এরপরে শুরু হয় দরপতন যা এখনো চলমান। এর মধ্যে দাম বৃদ্ধি ছাড়াও নানা কারনে আলোচনায় এসেছে কোম্পানিটি। এই সময়ের মাঝে মালিকানা পরিবর্তন হয় কোম্পানিটির।
পাশাপাশি স্বীকৃতিও পেয়েছে উল্লেখযোগ্য এই এক বছরে । গত বছরের শেষের দিকে এই কোম্পানিটি স্বীকৃতি পেয়েছে সেরা রিসোর্টের। দ্য ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডসে সেরা ৩টি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। সেরা লাক্সারি হোটেলগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পাকে পৃথিবীর সেরা বিচ সাইড লাক্সারি রিসোর্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে গ্লোবাল অর্গানাইজেশন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডস’। রয়েল টিউলিপ হিসেবে পরিচিত দেশের সবচেয়ে বড় এ লাক্সারি রিসোর্টটি সেরা বিচ সাইড লাক্সারি হোটেল অ্যাওয়ার্ডের পাশাপাশি সেরা লাক্সারি স্পা অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে সি পার্লের।শামীম এন্টারপ্রাইজের কাছে থাকা কোম্পানিটির ৪০ শতাংশ শেয়ার সি পার্ল সুন্দরবন ইকো রিসোর্টের কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে কোম্পানিটির মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালিকানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশ করা হয়। ডিএসই জানিয়েছে, শামীম এন্টারপ্রাইজের হাতে থাকা রয়েল টিউলিপের ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৯০০টি শেয়ার বা ৪০ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার সি পার্ল সুন্দরবন ইকো রিসোর্টের কাছে হস্তান্তর করে যার বাজার মূল্য ১ হাজার ৩৪৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩০ টাকা। সেসময় আলোচনা ছিলো এই সি পার্ল নিয়ে। এমনকি এমনও আলোচনা উঠেছিলো শেয়ার স্থানান্তর বা অধিগ্রহণের তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে মালিকানা পরিবর্তনের ছয় মাস ধরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৫ গুণ বাড়ানো হয় । বিনিয়োগাকারীরা বলছেন শেয়ারটির দাম বছর ব্যবধানে আকাশে উঠেছিলো এবং আবার কমতে শুরু করেছে। আলোচিত এই কোম্পানিটির শেয়ার বেশিরভাগ সময়ই ছিলো উর্ধ্বমূখী। বিনিয়োগকারীদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, ৪১ টাকা থেকে মূল্য বেড়ে ৩৩০ এর ঘর পর্যন্ত ছোয়া এই কোম্পানিটি আবার ফিরে যাচ্ছে তলানীতে। দুনিয়ার সেরা একটি রিসোর্টের পুরস্কার পাওয়া এই রিসোর্টের শেয়ারের আসলে দাম বেড়েছিলোই কেনো এতো? কিংবা আবার কমা শুরুর পেছনে কি রয়েছে কোন উল্লেখযোগ্য কারন? এধরনের নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। এ ব্যাপারে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের কোম্পানি সচিব আজহারুল মামুনের সাথে যোগাযোগ করার চেস্টা করে দ্য রিপোর্ট। কিন্তু একাধিকবার চেস্টা করেও তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে রিসোর্ট এবং হোটেল ব্যবসায় যাত্রা শুরু করা সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড ২০১৯ সালে দেশের দুই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০১৯-২০ ও ২০-২১ অর্থবছরে মুনাফা কম হয়। তবে ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিদায়ী বছরে ২০২২ আগের অর্থবছরের তুলনায় ১১৯ শতাংশ মুনাফা বেড়েছে কোম্পানিটির। সেখান থেকে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫০ পয়সা করে নগদ লভ্যাংশ দেয়া হয়েছে।
(দ্যরিপোর্ট/মাহা/৬ এপ্রিল,২০২৩)