জাহাঙ্গীরকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। শৃঙ্খলা মেনে চলার অঙ্গীকার করে দলে ফেরার চার মাস যেতে না যেতেই বিদ্রোহ করায় গাজীপুরের নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে আর সুযোগ দিতে চায় না দলের নেতারা।
রোববার (১৪ মে) আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয় বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
সভার সিদ্ধান্ত সুপারিশ আকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানোসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের জানান ওবায়দুল কাদের।
সভা সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বহিষ্কারের বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করেন। বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্য তার এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা মত দিয়েছি জাহাঙ্গীর আলমকে কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি দেওয়ার জন্য। এমন শাস্তি দিতে হবে, যেন তাকে আর ক্ষমা করার কোনো সুযোগ না থাকে।
আজকের সভায় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তিদাশ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, উপপ্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপদপ্তরবিষয়ক সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী।
জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে যে দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে, এর আগেই তা জানিয়েছেন দলটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
গত ৪ মে গাজীপুর গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এক বৈঠকে তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলম ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন—বাকি জীবনে আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজ করবেন না। তাই জাহাঙ্গীর আলমকে শেখ হাসিনা সাধারণ ক্ষমা করেছেন। অথচ এবার তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ফের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, এ অপরাধ জাহাঙ্গীর আলমকে শাস্তি পেতেই হবে।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনেই জাহাঙ্গীর ছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতের বিপরীতে প্রার্থী হন তিনি। অনুরোধেও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি জাহাঙ্গীর। ওই নির্বাচনে আজমত পরাজিত হলে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ছিল।’
২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহাঙ্গীর নৌকা নিয়ে বিজয়ী হন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এক আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করে দলীয় সদস্যপদ হারান আওয়ামী লীগ। পরে বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকে।
ভবিষ্যতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করে আওয়ামী লীগ।
এ ঘটনার চার মাস যেতে না যেতেই দলের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে বসেন জাহাঙ্গীর। নিজের সঙ্গে মায়েরও মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।
বর্তমানে জাহাঙ্গীর এখন তার মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত।