দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের  পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত অধিকাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতের ব্যবসায় ভালো চুলছে না। একেতো ডলারের বেশি দামের ফলে কাঁচামাল খরচ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরি। শ্রমিকদের খরচ মেটাতে বেগ পেতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে।

ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। ফলে কমে গেছে মুনাফা। জ্বালানি, বিশেষত গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিও মুনাফার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) পুঁজিয়াবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির মুনাফা কমেছে। বিশেষত উৎপাদন ও সেবা খাতের কোম্পানিগুলোর হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বেশির ভাগের মুনাফা আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে অনেক।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত উৎপাদন ও সেবা খাতের তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন যাছাই বাছাই করেছে দ্য রিপোর্ট। প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে গেলো বছরের প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে , প্রায় ১১৭ টি কোম্পানিরই মুনাফা কমেছে।

বর্তমানে উৎপাদন ও সেবা খাতের ২৪১ কোম্পানি ডিএসইতে তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫১ কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে গেল প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। মুনাফা কমার কারণ ব্যাখ্যায় বেশিরভাগ কোম্পানিই একই কথাবলছে। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং এর ফলে কাঁচামাল কেনার খরচ বেড়ে পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। ফলে মুনাফাও পড়েছে ভাটা।
কিছু

তবে মুনাফা বেড়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, যমুনা অয়েল, বিএসআরএম লিমিটেড, সিঙ্গার, এমবি ফার্মা, রেকিট বেনকিজার, এপেক্স স্পিনিং, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ইত্যাদির মতো কিছু কোম্পানির।

তবে সার্বিক পরিস্থিতি খুবই করুন। দ্য রিপোর্ট ১৮৫ টি কোম্পানি নিয়ে পর্যালোচনা করেছে । সে হিসাবে দেখা গেছে এক বছরের ব্যবধানে নিট মুনাফা কমেছে ১ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা বা ৩২ শতাংশ। গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ১৮৫ কোম্পানির মুনাফার পরিমান ২ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে তারা নিট ৪ হাজার ১৯৬ কোটি ছিলো।

খাতওয়ারি হিসাবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় বস্ত্র খাত। এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৫৮টি। এর মধ্যে গেলো সপ্তাহ পর্যন্ত ৪৬টি কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । এর মধ্যে মুনাফা করেছে ২৮টি এবং লোকাসানে ১৮ টি কোম্পানি আছে। যদিও যে ২৮টি মুনাফা করেছে সেগুলোর মধ্যে এর আগের বছর থেকে মুনাফা কমেছে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত ২৩ কোম্পানির মধ্যে গেলো সপ্তাহ পর্যন্ত ১৯টির আর্থিক প্রতিবেদন মিলেছে। এর মধ্যে ১৫টি মুনাফা করেছে, লোকসানে রয়েছে চারটি। কিন্তু মুনাফায় থাকা ১৫টিরই মুনাফা গত হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।

প্রকৌশল খাতের ৪২ কোম্পানির মধ্যে ৩৩টি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ২৪টি মুনাফা করলেও এর ২৩টিরই মুনাফা কমেছে। ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩৪ কোম্পানির মধ্যে ২৫টি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে মুনাফায় থাকা ২০ কোম্পানির মধ্যে ১৯টির মুনাফা কমেছে ।

এ ব্যাপারে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ”এতোগুলো কোম্পানিই লস করেছে এটা আসলে অদ্ভুত”। তিনি বলেন, ডলার সংকট ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবাচনায় ব্যবসায় করা কঠিন। কিন্তু যেসব কোম্পানি মুনাফা করেছে তাদের জাদু টা কি? তিনি বিএসইসিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন “ কিছু কোম্পানি আক্সচে ইচ্ছা করে ল্ভ্যাংশ কম দেখায়। কিছু কোম্পানি কর কম দেখানোর জন্য উনাফা কম দেখায় এ ব্যাপারগুলো ঘটেছে কিনা দেখা উচিত।

(দ্য রিপোর্ট/,মাহা/ ১৩ মে ২০২৩)