পেঁয়াজের ঝাঁঝে দিশেহারা ক্রেতা,আমদানির আভাস
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাঙালির রসনা বিলাসের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান পেঁয়াজ। এই পণ্যটি ছাড়া যেন রান্না করাই দায়।
তাই তো পেঁয়াজের আকাশ ছোঁয়া দাম হওয়া স্বত্বেও কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তবে পেঁয়াজের এমন ঝাঁঝে দিশেহারা তারা।
সোমবার (২২ মে) রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ কিনতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইমরান হোসেন। যে পেঁয়াজ মাস দেড়েক আগে ৩০ টাকা কেজি কিনেছেন, সেটি এখন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শুনে হতভম্ব হয়ে যান তিনি। পুরো মাসের জন্য ১০ কেজি পেঁয়াজ কেনার ইচ্ছা থাকলেও চড়া মূল্যের কারণে পাঁচ কেজি কিনেই বাসায় ফিরেন তিনি।
ইমরান হোসেন বলেন, পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম মেনে নেওয়া যায় না। দেড় মাসের ব্যবধানে একটি পণ্যের দাম প্রায় দিগুণের বেশি হয়ে যায় কীভাবে?
তার ধারণা সামনে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিক করে তুলেছেন। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার পেঁয়াজের আবাদ কম হয়েছে, নষ্টও হয়েছে অনেকে। তাই চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বেশি।
সোমবার কারওয়ান বাজারে পাইকারি বাজারে মানভেদে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এর মধ্যে পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায়, কেজি হিসেবে ৭৬ থেকে ৮০ টাকা। রাজশাহীর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা পাল্লা, কেজি ৭৪ টাকা এবং ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পাল্লা, কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
অথচ গত দেড় মাস আগেও এই বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৭৫ টাকায়। কেজির হিসেবে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মজনু মিয়া বলেন, গত দুই বছর পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকরা লস করেছে। তাই এবার আবাদ কম। এজন্য বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। যেখানে ১০ ট্রাক পেঁয়াজ দরকার, সেখানে আসছে ৪-৫ ট্রাক। যার কারণে দাম বেশি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা যেই দামে পেঁয়াজ কিনে আনি, সেই দামেই বিক্রি করি। দাম যদি বেশি হয়, তাহলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। কম হলে, কম দামে বিক্রি করবো। পেঁয়াজের দাম কমলে আমাদেরই সুবিধা। ক্রেতাদের সঙ্গে আর দাম নিয়ে ঝগড়া করতে হবে না।
তবে ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম কমতে পারে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
আব্দুস সামাদ নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, এবার এমনিতেই পেঁয়াজের আবাদ কম হয়েছে। তার উপর এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। যার কারণে কৃষকরা পেঁয়াজ বেচা বন্ধ করে ধান কাটায় ব্যস্ত। এ জন্য বাজারে যে চাহিদা রয়েছে সেটি মিটছে না। ধান কাটা শেষ হলে পেঁয়াজ সরবরাহ বাড়বে। তখন হয়তো দাম কমবে। পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছে কৃষকরাই।
মো. মোস্তফা নামের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, আমদানি শুরু হলে দেশি পেঁয়াজেরও দাম কমে যাবে।
প্রীতম সাহা নামের এক ক্রেতা বলেন, এই দেশে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সবকিছুর দাম বাড়ায়। আর ভোগান্তি পোহাতে হয় ক্রেতাদের। এ নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। জনগণের কথা না সরকার ভাবে না ব্যবসায়ীরা।
এদিকে রোববার (২১ মে) রাজধানীর বাড্ডা আলাতুন্নেছা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও মেধা পুরস্কার এবং গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু বেশি মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুদ রেখে সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় আমদানি করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
রোববার সকালে সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকও বলেছেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানি হবে কিনা সেটা আগামী দুই একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দ্রুত ভারত থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৪৫ টাকার বেশি পেঁয়াজের দাম হওয়া উচিত না। পেঁয়াজ আমদানি করা হলে ৪৫ টাকার নিচে চলে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর দুই লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। সে হিসেবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়, তবুও এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে কেজিতে ৮০ টাকায় ঠেকেছে।
প্রসঙ্গত, কৃষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকার গত ১৫ মার্চ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র বন্ধ রেখেছে। ফলে এখন চাহিদার পুরোটা মেটানো হচ্ছে দেশি পেঁয়াজে।