দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আমরণ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে তিনি এ প্রত্যয় জানান।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো হুমকি বা হত্যাচেষ্টা কোনো দিনই তাকে পিছু হটাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। অন্তত ১৯ বার আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টে আমার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। সে হামলায় নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন, আহত হন কয়েকশো।

সরকার প্রধান আরও বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরণ কাজ করব। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও কেবল দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করছি। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

প্রধানমন্ত্রী জানান, জনগণকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা হবে যাতে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবদান রাখতে পারে। স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করছি। সারা দেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। আমাদের সরকার একটি ন্যানো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস করেছে। ডিজিটাল ডিভাইস বা প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সমাজে নারীদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ। এটিকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, নিরক্ষরতা ইত্যাদি দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে কষ্টার্জিত উন্নয়ন কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়। এটা আমাদের নারী-পুরুষের সম্মিলিত কাজ। আমি শুধুমাত্র তাদের কাঙ্খিত পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছি। ’

এসময় ভবিষ্যৎ নেতা হতে কাতার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, নেতার মূল্যবোধ থাকতে হবে এবং তাকে লক্ষ্যের প্রতি অটল থাকতে হবে। লক্ষ্য অর্জনে পরিপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন সমাজে ‘চেঞ্জ মেকার’ হতে হবে। সেইসাথে জনগণ ও দলের ওপর আস্থা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

এসময় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মানুষকে স্মার্ট জনগোষ্ঠি হিসেবে গড়ে তুলছে তার সরকার। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোন হতদরিদ্র বা গৃহহীন মানুষ থাকবে না বলেও জানান শেখ হাসিনা।

এর আগে দোহায় তৃতীয় কাতার অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনের যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারের লুসাইল শহরের ফেয়ারমন্ট এবং র‌্যাফেলস হোটেলে মঙ্গল ও বুধবার এ ফোরাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

শেখ হাসিনা কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির আমন্ত্রণে ফোরামে যোগ দিতে সোমবার দোহায় যান।

এই ফোরামের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী চলমান বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও সংকট এবং এর ফলে উদ্ভূত বিরূপ অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা।