ফুটবলার মহসিনের পাশে দাঁড়ালো বিসিবি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি গোলরক্ষক মোহাম্মদ মহসিন। এক সময়ের গোল পোস্টের এই অতন্দ্র প্রহরী ক্লাব ফুটবলে দেশের তিন প্রধান ক্লাব মোহামেডান, আবাহনী ও মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংসদের অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন। তবে বর্তমানে আর্থিক অনটন, শারীরিক অসুস্থতা ও জায়গা-জমি বেদখলে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ পাওয়া এই ফুটবলার।
মহসিন এখন শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ। সব হারিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন সাবেক এই ফুটবলার। একসময়ের কানাডা প্রবাসী মহসিন এখন ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে পারিবারিক ফ্ল্যাটে ছোট ভাইয়ের সাথে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর নজরে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের। সুদূর লন্ডন থেকে মহসিনের বিষয়টি বোর্ডকে দেখতে বলেছেন বিসিবি বস।
মঙ্গলবার (৬ জুন) বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরি সুজন সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শুধু ক্রিকেটারদের জন্য নয়, যেকোনো খেলার যে সকল ক্রীড়াবিদ আছেন, তাদের যেকোনো অসুবিধায় পাশে থাকার চেষ্টা করে। মহসিন ভাইয়ের ব্যাপারটা এমনই। আমাদের বোর্ড সভাপতির নজরে বিষয়টা এসেছে। তিনি এরমধ্যেই আমাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন, উনাকে (মহসিন) সার্বিক সহযোগিতার ব্যাপারে।’
‘তার পরিবারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার ব্যাপারে সেভাবে বলা হয়নি। আমাদের যেটা বলা হয়েছে, তার শারীরিক অবস্থা। সেক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে তার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা করা হবে। জায়গা-জমিসংক্রান্ত কিছু আইনী ঝামেলা আছে সে বিষয়ে এরই মধ্যে আমরা আমাদের আইনি পরামর্শককে বলেছি, তাদের কাগজপত্র দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত সহযোগিতা প্রদান করতে।’
মহসিনের খেলোয়াড়ি জীবনের কথা মনে করে কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন বিসিবির প্রধান নির্বাহী। সাবেক তারকা ফুটবলারের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মানছেন তিনি, ‘মহসিন ভাই আমাদের জাতীয় দলের একজন খেলোয়াড় ছিলেন। আমার যতটুকু মনে পড়ে, ওই সময়ে তার অনেক বড় ফ্যানবেজ ছিল। এখনকার সময়ে যত মিডিয়া ফোকাস বা যাই হোক... আমরা তখন সাদাকালো টেলিভিশনে খেলা দেখতাম। তার মতো একজন খেলোয়াড়ের পাশে থাকতে পারা ব্যক্তিগতভাবেও আমার জন্য অন্যরকম অনুভূতি।’
শুধু ক্রিকেট নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নানা সংকটে প্রায়ই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বিসিবি। প্রয়াত ফুটবলার মোনেম মুন্নার পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল বিসিবি। এছাড়া বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, সাঁতার ফেডারেশনকেও বড় অঙ্কের আর্থিক অনুদান দিয়েছে পাপনের নেতৃত্বাধীন বোর্ড। আর কিছুদিন আগেই সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে ৫০ লাখ টাকা পুরষ্কার দিয়েছিল তারা। এবার তারা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিল মহসিনের প্রতি।
খেলোয়াড়ি জীবনে মহসিন ছিলেন গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী। আশির দশকের শুরুর দিকে ঢাকার শীর্ষ ফুটবলে তার পথচলা শুরু হয়। আবাহনী, মোহামেডান ও মুক্তিযোদ্ধার মতো ক্লাবে ছিলেন ভরসার প্রতিশব্দ। ১০ বছরেরও বেশি সময় জাতীয় দলের গোলরক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন প্রথম পছন্দ। ছোটখাটো গড়নের হলেও তার স্কিল ও রিফ্লেক্স ছিল অসাধারণ। মাঠের ভেতরে-বাইরে দারুণ স্টাইলিশও ছিলেন। সেই সময়ের তরুণদের কাছে তিনি ছিলেন স্টাইল আইকন।
তবে নব্বই দশকের মাঝামাঝি ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টেনে কানাডায় চলে যান মহসিন। সেখানে একসময় খুব ভালো অবস্থা থাকলেও ২০১৩ সালে স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার। পরে আর্থিক নানা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে ২০১৪ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। সব হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় দিন কাটানোয় এক পর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন তিনি।