ক্যাপিটাল গেইনের উপর থেকে করমুক্ত সুবিধা বহাল
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ক্যাপিটাল গেইনের উপর থেকে করমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়টি সম্পূর্ণ অসত্য। এটি একেবারেই গুজব। সংশোধিত আয়কর আইনে এমন কোনো বিধান নেই। তাছাড়া একটি এসআরও’র মাধ্যমে ক্যাপিটাল গেইনের উপর থেকে কর প্রত্যাহার করা হয়েছিল। আবার কর বসাতে চাইলে ওই এসআরওটি আগে বাতিল করতে হবে। আর যে কোনো এসআরও বাতিল করতে হলে প্রয়োজন নতুন একটি এসআরও। কিন্তু এই ধরনের কোনো এসআরও এখনো জারি হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা এই ধরনের গুজবে বিশ্বাস না করতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে কোনো করদাতা যদি তাঁর রিটার্নে বিদেশে থাকা সম্পদ প্রদর্শন না করেন, আর সেই সম্পদের খোঁজ যদি কর কর্মকর্তারা পান এবং ওই সম্পদ অর্জনের উৎস ও অন্যান্য বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন, তবে ওই সম্পদের ওপর জরিমানা করতে পারবেন কর কর্মকর্তারা। সে ক্ষেত্রে কর কর্মকর্তা বিদেশে থাকা সম্পত্তির ন্যায্য বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা এবং তা আদায় করতে পারবেন। নতুন আয়কর আইনে এমন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। শিগগিরই আইনটি পাসের জন্য জাতীয় সংসদের বিল আকারে উত্থাপন করা হবে।
প্রসঙ্গত, বিদেশে সম্পদ থাকলে আয়কর রিটার্নেতা উল্লেখ করতে হবে। যদি কেউ বিষয়টি উল্লেখ না করে এবং এনবিআর অনুসন্ধান চালিয়ে বের করে- তাহলে বড় ধরণের শাস্তির বিধান থাকছে নতুন আয়কর আইনে। এছাড়া আয়কর আইনে এখন থেকে বিদেশ ঘুরতে গেলেই কর অফিসে সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে। বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে এ নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ জন্য বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশে, আয়কর রিটার্ন জমার সময় বর্তমানে সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত আছে। এ তিন শর্তের একটি প্রযোজ্য হলেই সম্পদের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক। শর্তগুলো হলো-১. অর্থবছরে মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা হলে; ২. একটি মোটরগাড়ির মালিক হলে; ৩. সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহ-সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হলে। এসব সম্পদে বিনিয়োগ করলেই বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সম্পদের রিটার্ন দিতে হয়।
নতুন আইনে বিদ্যমান তিন শর্তের সঙ্গে নতুন করে আরও তিনটি শর্ত যুক্ত হচ্ছে। সেগুলো হলো কোনো করবর্ষে কোনো করদাতা যদি চিকিৎসা বা হজসহ ধর্মীয় উদ্দেশ্যে বিদেশগমন ছাড়া অন্য কোনো কারণে ব্যক্তিগতভাবে বিদেশে যান, তাহলে তাঁকে সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোনো করদাতা যদি কোনো এক করবর্ষে দেশের বাইরে সম্পদ কেনেন, তাহলেও তাঁকে সম্পদের বিবরণী দিতে হবে। তৃতীয়ত, কোনো কোম্পানির শেয়ারধারী পরিচালক হলেও সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে। নতুন এ বিধান কার্যকর হলে কেউ যদি ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যান, তাহলে দেশে ফিরে রিটার্ন দেওয়ার সময় সম্পদের হিসাব কর কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। আপনার করযোগ্য আয় থাকুক কিংবা না থাকুক, দেশের সীমানা পেরোলেই ফ্ল্যাট, জমি, আসবাব, ব্যাংক–ব্যালান্সসহ যাবতীয় সম্পদের তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে নতুন আইনে। বর্তমানে কর শনাক্তকরণ নম্বরের (টিআইএন) সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসপোর্ট কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের স্বয়ংক্রিয় সম্পৃক্ততা রয়েছে। ফলে এখন আর কেউ বিদেশভ্রমণ করে তা চাইলেও লুকাতে পারবেন না।
এছাড়া প্রস্তাবিত অর্থবিলে করমুক্ত আয়সীমায় ও কর পরিশোধে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অর্থবিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এখন থেকে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরবর্তী ১ লাখ পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ, অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া করযোগ্য আয় থাকলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশনের জন্য ৪ হাজার টাকা, সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতাদের জন্য ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে। তবে করযোগ্য আয় না থাকলেও ইটিআইএন থাকলেই ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। তবে কোনো করদাতা যদি স্বল্প উন্নত বা কম উন্নত এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্পের ব্যবসা করেন, তবে যে বছরের কর প্রদান করবেন তা তার আগের বছরের উৎপাদনের পরিমাণ ১৫ শতাংশের বেশি কিন্তু ২৫ শতাংশের বেশি না, তাহলে আয়ের ওপর প্রদেশ আয়করের ৫ শতাংশ রেয়াত পাবেন। একইভাবে ২৫ শতাংশের বেশি হলে ১০ শতাংশ রেয়াত পাবেন। সারচার্জ হচ্ছে একধরনের মাশুল, যা বেশি সম্পদের মালিকরা নিয়মিত করের বাইরে পরিশোধে করেন। এত দিন ৩ কোটি টাকা হলে সারচার্জ দিতে হতো। প্রস্তাবিত অর্থবিলে কৌশলে অর্থমন্ত্রী বেশি ধনীদের ওপর চাপ কমাতে এ হিসাব বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করেছেন। বলা হয়েছে, নিট সম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি থেকে ১০ কোটি হলে ১০ শতাংশ, ১০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ২০ কোটির বেশি না এমন হলে ২০ শতাংশ, ২০ কোটির বেশি কিন্তু ৫০ কোটির কম হলে ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটির বেশি হলে ৩৫ শতাংশ সারচার্জ ধার্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে ভ্যাট অপরাধ প্রতিরোধে বা কোন বিরোধ দেখা দিলে ভ্যাটের রাজস্ব কর্মকর্তারা আগে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পণ্য বা সেবা বিক্রির নথি যাচাই-বাছাই করতে পারতেন। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন থেকে রাজস্ব কর্মকর্তারা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনার সম্পৃক্ততা আছে, এমন নথি যাচাই-বাছাই করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনারদের ক্ষমতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এখন থেকে তারা ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনার সম্পৃক্ততা আছে, এমন নথির মীমাংসা করতে পারবেন। উপকমিশনারদের ক্ষমতা ছিল ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নথি। এখন তা বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। যুগ্ম কমিশনারদের ক্ষমতা ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকার নথি করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এসব প্রস্তাব করা হয়েছে।