মসলার বাজারে ঈদের আঁচ,সবজিতে অস্বস্তি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আসন্ন কোরবানিকে সামনে রেখে মসলার বাজারে ঈদের আঁচ। সপ্তাহ ব্যবধানে আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, এলাচি, দারুচিনির দাম ১০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত দামের কারণে মানুষ মসলাজাতীয় পণ্য কেনা অনেক কমিয়ে সদিয়েছে। এতে ভরা মৌসুমেও মসলা বিক্রি ৭০ শতাংশের বেশি কমে গেছে সেখানে।
এছাড়া যারা সবজির দিকে ঝুঁকছেন, তাদের জন্যও কোনো সুখবর নেই। টানা অস্থিতিশীল সবজির দাম গত সপ্তাহে কিছুটা কমলেও তা আবার বেড়েছে। শুক্রবার সকালে রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট, মালিবাগ, রামপুরা ও মধ্যবাড্ডা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এসব দৃশ্য।
বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চিকন জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা এবং মিষ্টি জিরা ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে জিরা খুচরা পর্যায়ে ৮৫০ থেকে ৮৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গেল তিন মাস আগেও ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে জিরা। একইভাবে বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি এলাচি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। তিন মাস আগে এলাচির দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। ৮০০ টাকার লবঙ্গ বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৪৯০ টাকার গোলমরিচ ৬৭০ টাকা, বর্তমানে দারুচিনির দাম ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও তিন মাস আগে এই দাম ৭০ টাকা কম ছিল। তবে খুচরা বাজারে গোলমরিচ ১ হাজার টাকা ও লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এদিকে চীনা আদা ও চীনা রসুনের দামও বেড়েছে বাজারে। এর মধ্যে চীনা আদা পাওয়াই যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে আসা আদার দাম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং চীনা রসুনের দাম ১৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেড় মাস আগেও তা ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। আর গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। বর্তমানে যা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা দরে। গত রমজানের পর থেকে খাসির মাংসের দাম ১২৫০ টাকায় উঠেছে। তার আর কমেনি। মাংসের অতিরিক্ত দামের কারণে সীমিত আয়ের মানুষেরা তেলাপিয়া বা পাঙাশের মতো সস্তা দামের মাছের দিকে ঝুঁকছিলেন। ঠিক তখন থেকেই মাছের দামও বাড়তে শুরু করে। এরই মধ্যে তেলাপিয়া ও পাঙাসের দামও কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর ভালো চাহিদার মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের দাম এখন প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকার মধ্যে।
অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের চাষের রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের দাম প্রতি কেজি ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা। এসব মাছের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর উন্মুক্ত জলাশয়ের (নদ-নদীর) মাছের ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি। বাজারে পাবদা, টেংরা, কই, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামও কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ পর্যন্ত টাকা বেড়েছে। এদিকে, চড়া দামের বাজারে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে যারা সবজির দিকে ঝুঁকছেন, তাদের জন্যও কোনো সুখবর নেই। টানা অস্থিতিশীল সবজির দাম গত সপ্তাহে কিছুটা কমলেও তা আবার বেড়েছে। ৫০ টাকার মধ্যে শুধু গ্রীষ্মকালীন পটল-ঢেঁড়স মিলছে। অন্য সব বারোমাসি সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
তবে চাল, ডাল, সয়াবিন, আটা-ময়দা ও চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীলই আছে। অন্যদিকে, আমদানি অনুমতির পরেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তবে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় মিলছে। আর চিনির দাম আগের মত কেজিপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। এছাড়া ভোজ্যতেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হলেও প্রভাব পড়েনি বাজারে, পুরনো দাম অর্থাৎ প্রতি লিটার ১৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সোয়াবিন তেল।