দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ষান্মাসিক (জুলাই-ডিসেম্বর) বা ছয় মাস সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ, রোববার (১৮ জুন) বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে। মুদ্রানীতি দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রানীতির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়ে থাকে।

নতুন মুদ্রানীতি এমন সময়ে আসছে যখন দেশের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এবারের নতুন মুদ্রানীতিতে জানা যাবে, ‘ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়া-কমা, বাজারে টাকার সরবরাহ কেমন থাকবে বা ডলার-সংকট কাটাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বোর্ড সভায় নতুন মুদ্রানীতি নীতিগত ভাবে অনুমোদন হয়। এবারের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি জোর দেওয়া হবে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। যদিও দেশের অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন দিয়ে তৈরি করা হয় মুদ্রানীতি। বিনিয়োগ বৃদ্ধি-কর্মসংস্থান বাড়াতে বেসরকারি খাতে বিশেষ করে এসএমইতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর তাগিদ তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করা হ‌য়।

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। গত বছরেও জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা একই ছিল। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এ তথ্য জানান।

সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসব এবং ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি।’

চলতি অর্থবছরেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে সাময়িক হিসেবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হিসাব করা হয়।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার ক্রমান্বয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি থেকে বের হয়ে আসবে। একই সঙ্গে মেগা প্রকল্পসহ প্রবৃদ্ধি বাড়াবে, এমন চলমান ও নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে।

এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, আগামী অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগের পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে জিডিপির ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, চলতি বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে।

এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিতীয়ার্ধে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষে তথ্যানুযায়ী, গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে এসেছে। এ ছাড়া দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এসব কারণে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে। যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৪০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। এপ্রিলে তা ছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

অন্যদিকে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও এপ্রিলে ৯.৭২ শতাংশ পয়েন্ট থেকে বেড়ে মে মাসে ৯.৯৬ শতাংশ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

আসন্ন বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে (অনুদান ছাড়া) দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অনুদানসহ এ ঘাটতি দাঁড়ায় দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে।

ছক অনুযায়ী, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেবে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এছাড়া বৈদেশিক ঋণ হিসাবে নেবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার নিতে চায় ব্যাংক খাত থেকে। যার পরিমাণ ১ লাখ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এরপর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ১৮ হাজার কোটি টাকা আর অন্যান্য খাত থেকে আসবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।