টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার দুইযুগ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ২৩ বছর আগে আজকের এই দিনে (২৬ জুন) টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল বাংলাদেশ। নয়টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে দশম দেশ হিসেবে ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে নাম লিখিয়েছিল টাইগাররা। ইংল্যান্ডের লর্ডসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বোর্ড সভায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের পূর্ণ মর্যাদার এই খেতাব দেন তৎকালীন সভাপতি ম্যালকম গ্রে। তবে মর্যাদার এই খেতাবের পথযাত্রী হতে শুধু মাঠের পারফরম্যান্সই, বাংলাদেশকে অনেক কূটনৈতিক যুদ্ধও করতে হয়েছে।
২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর মাত্র ২৩ বছরে ১৩৮ টেস্ট খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেছে টাইগাররা। এর আগে, শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর পি সারা ওভালে অভিষেকের ১৭ বছরে ১শ’ টেস্ট খেলার মাইলফলক ছুঁয়েছিল সাকিব-তামিমরা।
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। মালয়েশিয়া হওয়া ওই টুর্নামেন্টে তৎকালীন ক্রিকেটের পরাশক্তি কেনিয়াকে হারায় বাংলাদেশ। তাদের পরাজিত করার মাধ্যমেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় লাল-সবুজ শিবির। এর দুই বছর পর প্রথমবার বিশ্বকাপ মঞ্চে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বাধীন দলটি।
বিশ্ব আসরে পরাক্রমশালী পাকিস্তান ও পরীক্ষিত স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় আকরাম-খালেদ মাহমুদরা। এর আগে, ১৯৯৮ সালে আইসিসি মিনি বিশ্বকাপ আয়োজন করে পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে চমক দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে দেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার ঢেউও বয়ে যায়। এরপর থেকেই মূলত আইসিসির পূর্ণ সদস্য হওয়ার দাবি জিইয়ে তুলেছিল লাল-সবুজ শিবিরের তত্কালীন শীর্ষ কর্তারা। অবশেষে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে ২০০০ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট পা রাখে ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত সংস্করণ টেস্ট আঙিনায়। টাইগারদের এই স্বীকৃতি অর্জনে অনস্বীকার্য ভূমিকা রাখেন আইসিসির সাবেক সভাপতি প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়াও।
এ ছাড়া বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর কূটনৈতিক দক্ষতাও সেই সময় প্রশংসা কুঁড়ায়। এরপর ২৩ বছর কেটে গেছে। স্বীকৃতির পাঁচ মাস পর ২২ গজে সাদা পোশাকের লড়াইয়ে শামিল হয় বাংলাদেশ। সেই বছরের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ।
প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৪০০ রান দাঁড় করায় বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে এক আগমনী বার্তাও পাঠায় টেস্টের নতুন সদস্যরা। টাইগারদের এই মহাকাব্যে ১৪৫ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন দলপতি বুলবুল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যর্থতায় ভারতের সঙ্গে ৯ উইকেটের অসহায় পরাজয় বরণ করে তারা। হারলেও আগামীর বার্তা ঠিকই জানিয়েছিল সেই দলটি।
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ৩৪ ম্যাচ পর প্রথম জয়ের স্বাদ নেয় টাইগাররা। কাঙ্ক্ষিত জয়টি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ঐতিহাসিক সেই জয়ের সাক্ষী চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এবং ১০ জানুয়ারি, ২০০৫। এই জয়ের পরপরই লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে ‘ল্যাপ অব অনার’ করে বাশার-মাশরাফিরা। এমন দৃশ্যের জন্যই পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছিল টাইগার সমর্থকরা।
দীর্ঘ এই পথচারণা খুব একটা সুখকর না টাইগারদের জন্যে। খণ্ড খণ্ড কিছু সুখস্মৃতি থাকলেও স্বপ্ন বিলাসের সঙ্গে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক অনেক বেশি। আর প্রাপ্তিটাও হয়তো এমনই, সবকিছু পাওয়াও যায় না, সব চিন্তা মেলেও না। এখনও এই সংস্করণে সংগ্রাম করছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে তলানির কাতারেই রয়েছে বাংলাদেশ (র্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে)। দীর্ঘ এই যাত্রায় ক্রমেই হারের তালিকা প্রশস্ত হয়েছে বাংলাদেশের।
১৩৮ টেস্টের মধ্যে মাত্র ১৮ টেস্টে জয়ের স্বাদ পেয়েছে সাকিব-তামিমরা। ১০২ হারের বিপরীতে ড্রও ১৮ ম্যাচেই। তবে মোট জয়ের আটটিই মিলেছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
ক্রিকেটের এই সংস্করণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য হোম ভেন্যুতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। বিশ্বমঞ্চে অন্যতম বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নামটিও লাল-সবুজের। বিশ্ব দরবারে তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।
অন্যদিকে দীর্ঘ এই যাত্রায় সাকিবের সঙ্গী হয়েছেন আরও চার পাণ্ডব। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মর্ত্তুজা ও মাহমুদ-উল্লাহ রিয়াদরা এই সংস্করণে দেশের নাম-যজ্ঞ আরও প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মুশফিক। এ ছাড়া একটি করে ডাবল সেঞ্চুরিতে নাম তুলেছেন সাকিব-তামিম। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে রান তুলে দলের আস্থার নাম হয়েছেন মুমিনুল হক। ধুঁকতে থাকা পেস ইউনিটের বিপরীতে বাঁ-হাতি স্পিনার রফিক, সাকিব, তাইজুলরা বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ আলোচিত। বল হাতে আশা জাগালে বেশি দিন সার্ভিস দিতে পারেননি মাশরাফি, শাহাদাতরা।
তবে দীর্ঘ ২৩ বছরের সত্যিকারের দ্রুতগতির ফাস্ট বোলার না মেলার আক্ষেপ ঘরের মাঠে সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে কিছুটা হলেও আশার বাণী জাগিয়েছে। প্রথমবারের মতো টেস্টে ১৪ উইকেট তুলে নিয়েছে টাইগার পেসাররা। বাংলাদেশের আগামীর টেস্ট যাত্রায় আরও নতুন পালক যুক্ত হোক, এটাই প্রত্যাশা টাইগার সমর্থকদের।