দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : দেশের বস্তিবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা জানতে শুমারির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর জন্য প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

এ বিষয়ে বিবিএস এর মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল দিরিপোর্ট২৪কে জানান, শুমারির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে ২০১২ সালের জুলাই মাস থেকে। মূল শুমারি অনুষ্ঠিত হবে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল, চলবে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর ডাটা প্রসেসিং ও রিপোর্ট প্রকাশসহ এ কর্মসূচির কাজ শেষ হবে ২০১৫ সালের জুনে।

বিবিএস সূত্র জানায়, স্বাধীনতার আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক ভূমিহীন, ছিন্নমূল ও বেকার মানুষ জীবিকার সন্ধানে গ্রাম থেকে শহরের দিকে আসতে থাকে। এ সময় অর্থের অভাবে তারা নিম্নমানের জীবনযাপন ও বস্তিতে বসবাস শুরু করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আশির দশকে দেশের বড় শহরগুলোতে বস্তির ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এ পরিস্থিতিতে গবেষক ও নীতি নির্ধারকরা বস্তি বিষয়ক বিস্তারিত তথ্যের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন।

তথ্যের ওই চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ১৯৮৫-৮৬ সালে প্রথম দেশের চারটি বড় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে বস্তি-শুমারি পরিচালনা করে। ১৯৯৭ সালে দেশের সবগুলো শহরে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বস্তি-শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে বস্তিবাসীদের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর একটি জরিপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

দ্বিতীয় বস্তিশুমারির উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা গেছে, দেশের বস্তির সংখ্যা, বস্তিতে অবস্থিত পরিবারের সংখ্যা, মানুষের বস্তিতে আসার মৌলিক ও মূখ্যকারণ চিহ্নিত করা, কোন কোন জেলা থেকে বেশী মানুষ বস্তিতে আসছে তা নিরূপন করা, বস্তিবাসীদের ভূমিহীনতা বিষয়ক তথ্য, বাসস্থান সংক্রান্ত আনুষাঙ্গিক তথ্য, শিক্ষা, পেশা ও পরিবেশগত তথ্য এবং বস্তিবাসীদের বয়স ও লিঙ্গ ভেদে বস্তির জনসংখ্যা নিরূপণসহ বস্তিবাসীদের আর্থ-সামাজিক চিত্র খুঁজে বের করা হবে।

শুমারির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা গেছে, চার পর্যায়ে এ শুমারি অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্যায়ে প্রাক শুমারি, দ্বিতীয় পর্যায়ে মূলশুমারি, তৃতীয় পর্যায়ে ডাটা প্রসেসিং এবং শেষ ধাপ হচ্ছে রিপোর্ট প্রকাশ। এছাড়া জোনাল অপারেশনের মাধ্যমে যেসব কাজ করা হবে সেগুলো হচ্ছে, কম্পিউটার জিও কোড তালিকা মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে হালনাগাদ করা, জিআইএস ম্যাপে গণণা এলাকা চিহ্নিত করা, সুপারভাইজার এলাকার স্কেচ ম্যাপ প্রনয়ণ করা, গণণা এলাকাভিত্তিক বস্তি খানার (পরিবার) সংখ্যা নিরুপন করা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারণ ও শুমারি কমিটি গঠন করা এবং গণণাকারী বাছাই ও নির্বাচন করা। এসবের অধিকাংশেরই কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বস্তিবাসীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, আবাসন ও সুপেয় পানি সরবরাহ করা এবং নিরাপত্তাসহ মৌলিক অধিকার সংরক্ষনে তথ্য উপাত্ত ভিত্তিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রনয়নে বস্তিশুমারি ও ভাসমান লোকগণণা ২০১৪ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ কর্মসূচীটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

এবারের শুমারিতে ডিজিটাল ম্যাপ (জিআইএস ম্যাপ) ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের বস্তির সংখ্যা, পরিবারের সংখ্যা, বয়স ও লিঙ্গ ভেদে বস্তির জনসংখ্যা নিরুপন করে কম্পিউটার ভিত্তিক তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা হবে। বস্তিবাসীদের এ তথ্যভান্ডার সংরক্ষণ (আর্কাইভ) করা হবে।

বিবিএস সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল শুমারির প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ শেষ করেছে। গনণাকারীরা বস্তি এলাকায় যে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাবে সেখানে ৪০টি প্রশ্ন রয়েছে।

(দিরিপোর্ট২৪/জেজে/এইচএস/এমডি/নভেম্বর ১২, ২০১৩)