সংলাপের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র
ঢাকায় দফায় দফায় বৈঠক উজরে জেয়ার
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নির্বাচন এবং শাসন ব্যবস্থায় বাংলাদেশির ব্যাপক অংশগ্রহণের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের প্রত্যাশার বার্তা দিয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটি এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংলাপের প্রত্যাশার কথাও ব্যক্ত করেছে। তারা বলেছেন, আমরা সংলাপের পক্ষে। তবে সংলাপের সঙ্গে আমরা যুক্ত নই। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর মধ্যাহ্নভোজ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধিদলের প্রধান উজরা জেয়া। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
বৈঠকে তাকে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র সচিব মোমেন। সচিব বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলী কৌরসহ বিভিন্ন খাতের কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা নির্বাচন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উজরা জেয়া বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের স্বীকৃতি দিতে আমি এখানে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায়। অবাধ ও মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
পাঁচ দশক ধরে দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট। বাইডেন প্রশাসনের বার্তা স্পষ্ট হয় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতির মাধ্যমে। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দৃষ্টিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা দিয়েছে। এতে সুশীল সমাজ ও স্বাধীন মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মানবাধিকারের উন্নয়ন ও মৌলিক স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে। এছাড়া সালমান এফ রহমানের বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নেওয়া ছাড়াও মার্কিন প্রতিনিধিদল আমেরিকান ক্লাবে নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক করে। এসব আলোচনায় ঘুরেফিরেই এসেছে কোনো প্রকার ভয়ভীতি ছাড়াই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি সমর্থনের কথা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন প্রসঙ্গে সরকারের তরফে বলা হয়, সেপ্টেম্বর নাগাদ আইনের সংশোধন করা হবে।
এদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে। উজরা জেয়া সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখতে চায়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সরকারের একাধিক মন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উজরা জেয়া বলেন, আমরা সবাই সংলাপের পক্ষে। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমরা সরাসরি যুক্ত নই। এই সফরে নির্বাচনের কথা বারবারই এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেছেন। উজরা জেয়া নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার প্রতি জোর দিয়েছেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর দেশটির জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসাবে প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন উজরা জেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। দলটি আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা ত্যাগ করবে। বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একের পর এক মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন এবং সুশাসনে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণের ওপর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা থাকবে, যেখানে সব নাগরিকের বিকাশ হবে। নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের বিষয়ে তার মনোভাব জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি অন্য মন্ত্রীদের কাছ থেকে জোরালো প্রত্যয়ের কথা শুনেছি। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গেও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের পালটা কর্মসূচি হিসাবে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের পাশের সড়কে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। কোনো ধরনের সংঘাত, সহিংসতা ছাড়াই গতকালের পালটাপালটি সমাবেশ শেষ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তিনি বলেন, গতকাল বিশাল জনসভা দেখেছি। স্বস্তির বিষয়টি হচ্ছে, কোনোরকম সহিংসতা ছাড়াই সেটা হয়েছে। আমরা যেমনটা দেখতে চাই, এটা তার সূচনা। ভবিষ্যতেও এটির প্রতিফলন থাকবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায় উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, আগামী ৫০ বছর এবং তার পরের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহায়তা, অর্থনৈতিক, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা খাতে আমাদের যে সহযোগিতা, তা সম্পর্কের শক্তিমত্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।
উজরা জেয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন। সাংবাদিকরা যাতে অবাধে এবং কোনোরকম ভয়ভীতি ও নিপীড়নের শিকার না হয়ে কাজ করতে পারেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ যে ভূমিকা পালন করে, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। তিনি বলেন, মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়ে, বিশেষ করে মতপ্রকাশের এবং সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন উজরা জেয়া।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ বহুমাত্রিক ও নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে কীভাবে মূল্যায়ন করে, সেটা তাকে জানিয়েছেন। শ্রম আইনের সংশোধনে বাংলাদেশ গত এক দশকে কী অর্জন করেছে, সেটাও তুলে ধরেছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং তাদের অধিকারের বিষয়ে উদ্যোগ চলমান আছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ছাড়া আগামী নির্বাচন, নাগরিক অধিকার, মানব পাচার প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
আমেরিকান ক্লাবে নাগরিক সমাজ, শ্রমিক সংগঠন ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক : বাংলাদেশ সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশের গণমাধ্যম, মানবাধিকারকর্মী, পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
একই সঙ্গে তিনি এসব খাতে নিয়োজিত কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের ভূমিকা আরও স্পষ্ট করার কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে আমেরিকান ক্লাবে দেশের নাগরিক সমাজ, শ্রমিক সংগঠন ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব বিষয়ে জানতে চান।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে বৈঠকে যোগ দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক ও টেলিভিশন টক শো তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, চাকমা রানী ইয়েন ইয়েন এবং বেসরকারি সংস্থা সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর একেএম নাসিম।
অনুষ্ঠানে উজরা জেয়া বাংলাদেশের অধিকারকর্মীদের কাজের পরিবেশ এবং সমস্যা সম্পর্কে জানতে চান। মার্কিন ভিসানীতির প্রভাবের বিষয়ে তাদের অভিমত শুনতে চান। জবাবে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যেসব বিতর্ক ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে, তা যারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দেবে, তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
যারা একটি ভালো নির্বাচনের পক্ষে কাজ করছে, তাদের তো ভয়ের কিছু নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ এবং এর ফলে গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের পথে কী ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তা জানতে চাইলে বলা হয়, আইনমন্ত্রী আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনটি সংশোধনের কথা বলছেন। কিন্তু সরকার চাইলে তো এখনই তা করতে পারে। তারপরও কেন সময় নেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন।
গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায়ের জন্য একটি পোশাক কারখানায় গিয়ে খুন হন শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের ভেতর ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। যাতে তারা তাদের অধিকারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ভয় পান। শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিয়ে একজন বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করলে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়া বৈঠকে বলা হয়, দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে পাহাড়ের প্রকৃত অবস্থা সবার সামনে তুলে ধরতে সরকারের উদ্যোগ দরকার।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : মার্কিন প্রতিনিধিদল দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বৃহস্পতিবার দুপুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, এগুলো নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ আসেনি, কোনো আলোচনাই হয়নি।
তারা এতটুকু বলেছেন যে, তারা কোনো পার্টিকে এনকারেজ (উৎসাহিত) করার জন্য এখানে আসেননি। তারা কোনো দলকে সমর্থন করেন না। তারা এসেছেন বাংলাদেশে যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়। এর বাইরে তারা কিছুই চান না, কিছুই বলেননি। তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আসেননি বলেও আমাদের জানিয়েছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কোনো কথা হয়নি-আইনমন্ত্রী : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কোনো কথা হয়নি। এ বিষয়ে তারাও জিজ্ঞেস করেননি, আমারও বলার প্রয়োজন হয়নি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে কথা হয়েছে। আমি আগেই বলেছিলাম, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশোধন হবে। আজও তাদের সে বিষয়টিই প্রকারান্তরে জানিয়েছি। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিরা পরিষ্কারভাবেই বলেছেন, তারা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড নিউট্রাল ইলেকশন দেখতে চান।
মন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু বিষয় নিয়ে তারা আমাকে বলেছেন। সেসব বিষয় নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। সেসব বিষয় নিয়ে তারা বলেছেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলে ভালো। আমি তাদের বলেছি, বাংলাদেশে এখন বিচারহীনতার আগের সেই সংস্কৃতি নেই। এখন দেশে সুষ্ঠু তদন্ত এবং সঠিক বিচার হয় এবং তাই হবে। শহিদুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে তারা কথা বলেছিলেন। আমি এই পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণভাবে যেটা আলাপ করার সেটা করেছি। তবে মানবাধিকার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।
আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব কমেছে-সালমান এফ রহমান : প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব কমেছে। কূটনীতিকদের এত আসা-যাওয়া এটাই প্রমাণ করে। বৃহস্পতিবার রাতে সালমান এফ রহমান তার বাসভবনে সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন। নৈশভোজের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া র্যাবের প্রশংসা করেছেন। নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার যেন আরও জোরালো হয় সেজন্য সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, তারা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চেয়েছেন। বলেছেন কোনো দলের পক্ষে নন তারা। বুধবার দুই দলের কর্মসূচি পালনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। ভবিষ্যতে এটি অনুকরণ করতে বলেছেন। ভিসানীতিও কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে তারা করেননি বলে জানিয়েছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি।
তিনি আরও বলেন, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো দেখেছেন তারা। নির্বাচন নিয়ে তাদের বক্তব্য তারা কোনো দলকে সমর্থন করে না। তারা চায় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর বিষয়েও আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, উজরা জেয়া এবং ডোনাল্ড লুর এটি একটি রুটিন সফর। শুধু নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আসেননি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এখনো বিএনপি গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা শুধু নির্বাচন নিয়ে কাজ করতে আসেননি, এটা তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ সফর।