দেশের প্রকৃত রিজার্ভ ২৩৫৭ কোটি ডলার
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সার্বিক অর্থনীতির সূচকগুলোর হালনাগাদ অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রিজার্ভের এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
তারা প্রথমবারের মতো রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করল। একই সঙ্গে আগের মতো রিজার্ভের গ্রস হিসাবও প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে নিট রিজার্ভ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৩৫৭ কোটি ডলার, যা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত আমদানির সাড়ে তিন মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব।
স্বাভাবিক আমদানিতে আড়াই মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। গ্রস রিজার্ভ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি ডলার। গ্রস রিজার্ভ থেকে ৬৪০ কোটি ডলার বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ হরা হয়েছে। রিজার্ভের এ অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক আগে রিজার্ভের গ্রস হিসাব প্রকাশ করত। রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অন্য খাতে বিনিয়োগ করা অর্থ রিজার্ভে দেখানোর সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ দেখাত। এ নিয়ে আইএমএফ আপত্তি তোলে। কিন্তু তাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্ণপাত করেনি।
আইএমএফ-এর কাছে বাংলাদেশের চাওয়া ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে গত বছরের শেষদিকে ঢাকায় আসে সংস্থাটির মিশন। তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম শর্তগুলোর মধ্যে রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ ছিল একটি।
চলতি জুলাইয়ের মধ্যে নিট হিসাব প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা প্রকাশ করল। যদিও এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল রিজার্ভের নিট হিসাব তারা আগেও করেছে, এখনো করছে, ভবিষ্যতেও করবে। তবে তা প্রকাশ করবে না। এখন এটি প্রকাশ করল।
এদিকে আইএমএফ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের গ্রস রিজার্ভ ২ হাজার ৯৯৬ কোটি ডলারে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল, যা মোট আমদানি ব্যয়ের সাড়ে ৩ মাসের সমান। একই সঙ্গে ওই সময়ে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলারে নেমে আসতে পারে। আইএমএফ-এর পূর্বাভাসের চেয়ে নিট ও গ্রস রিজার্ভ বেশি কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও চেয়েছিল রিজার্ভ ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মধ্যে ধরে রাখতে। শেষ পর্যন্ত তা পারেনি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, হুন্ডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এতে রিজার্ভ আগামী দিনে বাড়বে।
দেশের আমদানি ব্যয় ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ৯৫০ কোটি ডলারে উঠেছিল। পরে তা নিয়ন্ত্রণ করায় কমে আসে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিমাসের আমদানিতে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়ে থাকে। কঠোর নিয়ন্ত্রণ করে তা পৌনে ৬০০ কোটি ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে।
গ্রস রিজার্ভের মধ্য থেকে শ্রীলংকাকে ঋণ হিসাবে দেওয়া হয় ২০ কোটি ডলার, যা এখনো ফেরত আসেনি। আগামী সেপ্টেম্বরে তা পাওয়ার কথা। কিন্তু ওই সময়ে পাওয়া যাবে না। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে নেওয়া হয়েছে ৭০০ কোটি ডলার। এর আকার ছোট করে এখন ৪৬০ কোটি ডলার করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন তহবিলে ২০ কোটি ইউরো ও ২০ কোটি ডলার স্থানান্তর করা হয়েছে। যে কারণে গ্রস রিজার্ভের ২৯৯৭ কোটি ডলার পুরোটা ব্যবহারযোগ্য নয়। প্রকৃত রিজার্ভ ২৩৫৭ কোটি ডলারই ব্যবহারযোগ্য। এ কারণে প্রকৃত রিজার্ভ দিয়েই ঝুঁকির হিসাব করতে হবে।
গত জুনে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ, রপ্তানি বেড়েছে আড়াই শতাংশ। আমদানি কমেছে ১১ শতাংশ। এখন আগের বকেয়া ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ায় রিজার্ভ কমছে। আগামী বছর থেকে এ চাপ কমে যাবে। তখন রিজার্ভ বাড়বে।
২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এরপর থেকে তা নামতে থাকে। এখনো নামছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও রিজার্ভের নিম্নগতি ঠেকানো যাচ্ছে না। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় দেশে ডলারের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। বর্তমানে প্রতি ডলার গড়ে ১০৯ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগে ছিল ৮৬ টাকা