দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসএসই বোর্ডে কোম্পানি মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোটেকের প্রয়াত পরিচালক রফিকুল আলমের মালিকানার শেয়ার আত্মসাৎ করার চেষ্টা চলছে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ এসেছে। ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে শেয়ার ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন এসএমএস প্ল্যাটটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মাস্টার ফিড অ্যাগ্রোটেকের প্রয়াত পরিচালক রফিকুল আলমের স্ত্রী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন। এর প্রতিকার চেয়ে সোমবার (২৪ জুলাই) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছেন তিনি। 

সেখানে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, গত ১৭ জুলাই তার বাবা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া মো. আবুল বাসার এবং মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবীর হোসেনকে নিয়ে ফার্স্ট ক্যাপিটালে যান। শেয়ার বিক্রয়ের টাকা চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মো. কাউসার আল মামুন তাদের সবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

অভিযোগ পত্রে মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে প্রতিকার চেয়েছেন উম্মে হাবিবা। তিনি লিখেছেন, গত বছরের ১৫ জুলাই আমার স্বামী (মাস্টার ফিডের প্রয়াত পরিচালক) মৃত্যুবরণ করেন। ফলে আদালতের রায়ে উত্তরাধিকার সার্টিফিকেট অনুযায়ী স্বামীর মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বা ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার পেয়েছেন তিনি। এ শেয়ার নিজের নামে নিতে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের মতিঝিল শাখায় একটি বিও হিসাব খুলেন। যার নম্বর - বিও আইডি নং ১২০৪৪৩০০৭৫৮৭৪৯৪৯। পরবর্তীতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন নিয়ে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ওই বিও হিসাবে শেয়ার স্থানান্তর করা হয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। উম্মে হাবিবা বলেন, বিও হিসাবে শেয়ার স্থানান্তরের পর পর্যায়ক্রমে শেয়ার বিক্রি করে ও বিভিন্ন তারিখে ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও মো. কাউসার আল মামুনের অনুমোদনের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন উম্মে হাবিবা। এ ক্ষেত্রে গত ১৪ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত সময়ে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন তিনি। কিন্তু এরপরে অজ্ঞাত কারণে সিইও কাউসার উম্মে হাবিবার পরিচয় নিয়ে অহেতুক বিভিন্ন রকম অজুহাত তৈরি করে টাকা দেওয়া বিলম্ব করার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেছেন উম্মে হাবিবা। এমনকি তিনি বলেন, আপনি উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন না এবং আপনার সঙ্গে ব্যক্তি আপনার বাবা নন, এগুলো সব সাজানো নাটক। তখন তাকে প্রমাণ হিসেবে সব কাগজ মিলিয়ে দেখতে বলেন উম্মে হাবিবা। এছাড়া অপমানজনক ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে হেনস্থা করেন- বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে উম্মে হাবিবা আরও বলেন, ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও’র আচরণ কাম্য ছিল না। যা উনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখলেই প্রমাণিত হবে। চিঠিতে উম্মে হাবিবা আরও বলেন,আমি প্রমাণ হিসেবে বিএসইসিতে স্বামী রফিকুল আলমের মৃত্যু সনদ, আদালতের উত্তরাধিকার আদেশ, ডিএসইর অনুমোদন কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ফান্ড রিকুইজিশন স্লিপ এবং কাবিননামার কাগজ জমা দিয়েছি।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কমিশনে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে কারো বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

প্রসংগত, ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইওমো. কাউসার আল মামুনগত সপ্তাহে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করেন। যেখানে তিনি মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক,কোম্পানি সচিবের বিরুদ্ধে শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ তুলে বলেন, এক মহিলাকে রফিকুল আলমের স্ত্রী বানিয়ে তার মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ হাতিয়ে নিয়েছেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কবির হোসেন এবং কোম্পানি সচিবসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। সেসব শেয়ার থেকে ১৫ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে ১ কোটিও বেশি টাকা তুলে নিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবীর হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, " বিভিন্ন গণমাধ্যম সুত্রে জানতে পারেছি একটি ব্রোকারেজ হাউজের মালিক আমার ও আমার কোম্পানির নামে মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্য দিচ্ছে। এসব মিথ্যা অভিযোগে আমার ব্যাক্তিগত ইমেজের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোম্পানির সুনাম। এসবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো"। তিনি আরো বলেন, " যে যাই অভিযোগ করুক আমার কাছে প্রোপার ডকুমেন্টস আছে। বিএসইতে আমিও অভিযোগ জানাবো"।

এ ব্যাপারে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) মো. কাউসার আল মামুনকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে একাধিবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(দ্য রিপোর্ট/ মাহা/২৪ জুলাই,২০২৩)